Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
লাগে না ‘ডেথ সার্টিফিকেট’। ‘বার্নিং সার্টিফিকেট’ আসে অন্য শ্মশান থেকে। কোথাও কমিটি চাঁদা কাটে, কোথাও ধু-ধু প্রান্তরে নজরদারির বালাই নেই। কী ভাবে চলছে এই সব অনুমোদনহীন শ্মশান? খোঁজ নিল আনন্দবাজার
Death

কাগজপত্র নেই, সরকারি টাকা আসে

অস্বাভাবিক ভাবে মৃত কারও মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই যদি দাহ করা হয়, তার দায় কে নেবে?

এই সেই শ্মশানঘাট। করিমপুরে সোমবার।

এই সেই শ্মশানঘাট। করিমপুরে সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

অমিতাভ বিশ্বাস
করিমপুর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২২ ০৬:০২
Share: Save:

শোনা যায়, প্রায় পাঁচশো বছর আগে খরস্রোতা ভৈরব নদের পাশে বালিয়াডাঙা গ্রামে তৈরি হয়েছিল শ্মশান। সে দিনও যে ভাবে শবদাহ হত, আজও সেই ভাবেই হয়ে আসছে — কোনও বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই। ডাক্তারের দেওয়া ‘ডেথ সার্টফিকেট’ দেখানোর বালাই নেই।

কী রকম?

মুরুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিয়াডাঙা গ্রামের বাসিন্দা রাজীব পাল বলছেন, “আমরা তো চিরকলা ওখানেই দাহ করে আসছি। কোন ডাক্তারি সার্টিফিকেট কিংবা পঞ্চায়েতের কাগজ নিয়ে যেতে হয় না। আদতে লাগে কিনা তা-ও জানা নেই।” তার পরেই তিনি যোগ করেন, “কাগজপত্র নিয়ে গিয়েও লাভ নেই। শ্মশানে দেখার কেউ নেই। মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেললেই হল। কোনও দিন কোনও সমস্যা হয়নি।”

যেহেতু ওই শ্মশানের দায়িত্বে কোনও কর্মী নেই, তাই সেখান থেকে দাহকার্যের প্রমাণ হিসাবে ‘বার্নিং সার্টিফিকেট’ দেওয়ারও প্রশ্ন নেই। আর ‘বার্নিং সার্টিফিকেট’ যদি না থাকে, কিসের ভিত্তিতে পঞ্চায়েত থেকে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়?

স্থানীয় সূত্রে জানা যআয়, আশা কর্মীরা পঞ্চায়েতে গ্রামবাসীর মৃত্যুর খবর জানান। বালিয়াডাঙা দিয়াড়পারা গ্রামের এক আশাকর্মী প্রতিভা পাল জানান, এলাকায় কারও মৃত্যু হলে তিনি সেই বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে পঞ্চায়েত অফিসে যেতে বলেন। তাঁর কথায়, “যিনি মারা গিয়েছেন তাঁর কোনও নিকটাত্মীয়কে পঞ্চায়েতের নির্দিষ্ট ফর্মে মৃত্যুর কারণ জানিয়ে স্বাক্ষর করতে হয়। চিকিৎসকের দেওয়া ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লাগে না। এই ভাবেই চলে আসছে। কোনও অস্বাভাবিক ঘটনার সম্মুখীন এখনও হতে হয়নি।”

কিন্তু যদি ঘটেই যায় কোনও ‘অস্বাভাবিক ঘটনা’? অস্বাভাবিক ভাবে মৃত কারও মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই যদি দাহ করা হয়, তার দায় কে নেবে?

প্রতিভার দাবি, “কোন মৃত্যু স্বাভাবিক আর কোন মৃত্যু অস্বাভাবিক, তা দেখার দায় কিন্তু আমাদের নেই। তবে পঞ্চায়েতকে আমাদেরই অফিশিয়ালি খবরটা দিতে হয়।” তা হলে দায় নেবে কে? মুরুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের দেবব্রত ধর বলছেন, “আসলে দাহ করার আগে মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক তা জানার জন্য কাগজপত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা আগে কখনও সামনে আসেনি। গণধর্ষণের পরে মৃত এক কিশোরীর দেহ কাগজপত্র ছাড়াই গ্রামের শ্মশানে সৎকারের পর এই প্রশ্ন উঠছে। পঞ্চায়েত থেকে মৃত্যু শংসাপত্র দেওয়ার আগে মৃতের পরিবারের লোকেদের থেকে ভোটার কার্ড বা আধার কার্ডের প্রতিলিপি-সহ আবেদনপত্র নেওয়া হয়। এর পর রেশন কার্ড সারেন্ডার সার্টিফিকেট আমাদের কাছে জমা দিলে তবেই আমরা ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিই। তার জন্য বার্নিং সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না। আইনত সেটি লাগে কিনা তা-ও আমার জানা নেই।”

দাহ করার আগে কাগজপত্র না লাগলে কী হবে, পঞ্চায়েতের তরফে শ্মশানযাত্রীদের বসার জায়গা, দাহ করার পাকা জায়গা এবং পাঁচিল দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির বিধায়ক তহবিল থেকে শৌচাগার নির্মাণের কাজও শুরু হবে।

প্রশ্ন হল: যেখানে সরকারি অর্থ ব্যয় হচ্ছে, সেই শ্মশানে শবদাহের আগে ডাক্তারের দেওয়া সার্টিফিকেট এবং সৎকারের পরে বার্নিং সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা নেই কে? আর যদি তা না-ই থাকে, এমন শ্মশানে বিধায়কের তহবিল থেকে টাকা দেওয়াই বা হচ্ছে কেন?

করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায় বলেন, “ওই শ্মশানে যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সৎকার করা যায়, তা আমার জানা ছিল না। কোনও দিন কোনও বিতর্ক হয়নি। এলাকার মানুষের কথা ভেবেই টাকা দিয়েছি। তবে বিতর্ক যখন তৈরি হয়েছে, পঞ্চায়েতকে বিষয়টি দেখতে বলব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Death Crematorium
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy