প্রতীকী ছবি।
গভীর রাত থেকেই চোখে ঘুম নেই তুঁতবাগানের। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছোঁয়ার আগেই তিন জনের খুনের খবরে চমকে জেগে উঠেছে পলাশিপাড়া রানিনগরের এই তল্লাট। প্রথমে হতবাক— তার পর কে করল? কেনই বা করল এই জল্পনায় রাত ভোর হয়ে গিয়েছে।
গ্রামের দরিদ্র ভাগচাষি ডমন রাজোয়ার। স্ত্রী সুমিত্রা রাজোয়ার, সেজো মেয়ে মালা মণ্ডল আর নাতি-নাতনিদের নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। মালার স্বামী বিধান মণ্ডলের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার পাটুলি। তবে তাঁর মা-বাবা না থাকায় শ্বশুরবাড়িতেই স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। গত কিছু দিন ধরে কর্মসূত্রে তিনি হরিয়ানায় থাকেন। তাঁদের সাত ও পাঁচ বছরের দু’টি মেয়ে ও দেড় বছরের ছেলে মায়ের কাছেই ঘুমোচ্ছিল। যে কারণেই হোক আততায়ী তাদের রেহাই দিয়েছে।
মঙ্গলবার সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আবাস যোজনার টাকায় করা হয়েছে ইটের ঘর। তবে তার দরজা বাঁশের বেড়ার, উপরে টিন দেওয়া। জানালায় দড়ি দিয়ে বাঁধা পলিথিন। উঠোনে বৃষ্টিতে ভিজছে জামাকাপড়। ছড়িয়ে রয়েছে দুই জোড়া জুতো। একটু এগোলেই বাড়ির দরজা আর চৌকাঠে জমে রয়েছে রক্ত। এই জায়গাতেই উপুড় হয়ে পড়েছিল ডমনের রক্তাক্ত নিথর দেহ। বাড়ির সামনে প্রতিবেশীদের জটলা। ডমনের চার মেয়ে। প্রত্যেকেই বিবাহিত। দুঃসংবাদ পেয়ে সকালেই মাটিয়ারি, দাইহাটা ও জামালপুর থেকে তিন মেয়ে চলে এসেছেন। রাত থেকে নাবালক ছেলেমেয়ে তিনটি গ্রামেই নিকটাত্মীয় সরস্বতী মণ্ডলের বাড়িতে ছিল। মালার বোনেরা আসার পরে তাদের বাড়িত নিয়ে আসা হয়েছে।
দেড় বছরের দুধের শিশুটি বাড়ির সামনেই মাসির কোলে শুয়ে ছিল। বাকি দুই মেয়ে চারপাশে সকলের কান্নাকাটি দেখে চুপটি হয়ে দাঁড়িয়ে। বড় মেয়েটি বলে, “রাতে আমি আর বোন বাথরুম থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়ি। তার পর পাশের বাড়ির দাদুর ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি, মেঝেতে দিদা শুয়ে আছে।” এই তিন মাতৃহারা নাবালকের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বাড়ি থেকে গাঁয়ের প্রত্যেকে। বিধান আপাতত ফিরে এলেও তাকে ফের কাজে যেতে হবে। সন্তানদের কি সে নিয়ে যেতে পারবে? তাদের দেখভাল করবে কে? মালার মেজদি সুন্দরী রাজোয়ার বলেন, “আজ আমরা এসেছি। কিন্তু এ বাড়িতে এসে তো আর থাকতে পারব না। বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে?”
গোটা ঘটনায় গ্রামের লোক হতবাক তো বটেই, অনেকে মনে মনে ফুঁসছেনও। এ দিন এখানে-ওখানে জটলায় অনেককেই বলতে শোনা যায়, যে গ্রামে একটা পাখি পর্যন্ত চুরি হয় না সেই গ্রামে এক বাড়িতে তিন জন খুন! যে ভাবেই হোক দ্রুত আততায়ীকে খুঁজে বার করে সাজা দেওয়ার দাবি তুলছেন তাঁরা। তৃণমূলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি কল্লোল খাঁ বলেন, “এই ঘটনায় যথাযথ তদন্তের জন্য পুলিশকে এবং জেলাশাসককে বলা হয়েছে। যেহেতু ওই পরিবারে তিনটি নাবালক রয়েছে, বাবা না-ফেরা পর্যন্ত তাদের সমস্ত রকম দেখভাল যাতে পুলিশ করে, তার জন্য জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy