নিজস্ব চিত্র।
সাহেবনগরের বুক চিরে যাওয়া ঝকঝকে পাকা রাস্তাটা তখন কাঁচা। সেই রাস্তা ধরে মোষের গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। ঘোড়ায় চেপে ওয়াট সাহেবও সেই পথ ধরে যাচ্ছিলেন কুঠিবাড়ির দিকে। আর মোষের গাড়িকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময়ে অপমান করেছিলেন সুঠামদেহী পাকানো গোঁফের ইসমাইলকে। বলেছিলেন, 'নটি বাঙালি সাইড যাও!' আর রক্ষে নেই, হাতে থাকা মোষ তাড়ানোর সেই চাবুক দিয়েই ওয়াট সাহেবকে বেদম পিটিয়ে ছিলেন সাহেবনগরের ইসমাইল হোসেন। শেষ পর্যন্ত ঘোড়া ফেলে সাহেব দৌড়ে কুঠিবাড়ি গিয়ে এক ঘড়া জল খেয়েছিলেন।
ইংরেজ আমলের গল্পটা যেন দিন কয়েক থেকেই আবার ঘুরে ফিরে চর্চা হচ্ছে সাহেবনগরের চায়ের দোকান থেকে মাচায়। সকলেই বলছেন— সাহেবদের টাইট করে ছেড়েছিলাম আমরা। তহির আর কত বড় সাহেব হয়েছে!’ প্রতিবাদ রক্তে আছে সাহেবনগরের। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ইংরেজ আমলে তাঁদের বিরুদ্ধে বারকয়েক আন্দোলন হয়েছে সাহেব নগর এলাকায়। তা নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের, আবার একাত্তরের যুদ্ধে বাংলাদেশি তাবড় তাবড় নেতা শিল্পীদের আস্তানা ছিল এই সাহেবনগরে।
ফলে একাধিক ইতিহাস সাহেবনগরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। বাংলাদেশের শিল্পীদের হাত ধরেই সংস্কৃতি চর্চায় জোয়ার এসেছিল সাহেবনগরে।
স্থানীয় বাসিন্দা সপলুল হক সরকার বলছেন, ‘‘দেশভাগের আগে থেকেই শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চা হতো সাহেবনগরে। স্থানীয় শিল্পীদের যাত্রা নাটক আলকাপ কবি গানে মেতে থাকত এলাকা।’’ আবার একাত্তরের যুদ্ধের সময় রাজশাহী বেতারের শিল্পী আব্দুল খালেক, আব্দুল আজিজ এবং সিরাজ সাহেব ছাড়াও একাধিক নামী শিল্পী ছিলেন সাহেবনগরে। তাঁদের হাত ধরে সংস্কৃতি অন্যমাত্রা পেয়েছিল এই এলাকায়। ওই শিল্পীরা যে কটা দিন সাহেবনগরে ছিলেন তাঁরা নিজেদের শিল্পকর্মকে উজাড় করে দিয়েছিলেন।’’
তখনও দেশভাগ হয়নি, ইংরেজ সাহেবদের কুঠিবাড়ি ছিল জলঙ্গির এই ছোট্ট জনপদে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেই ইংরেজ আমলে কুঠিবাড়িকে ঘিরেই গ্রামের নাম হয় সাহেবনগর। তৈরি হয় পাকা রাস্তা, স্কুল একটু একটু করে জমে ওঠে সাহেবনগর। এখন গ্রামে একটি হাইস্কুলের পাশাপাশি দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy