Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Democracy

গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ ইতিহাস ক্ষমা করেনি

১৯৭৫ সালের ২৫ মে দেশ জুড়ে জারি হয়েছিল ইমারজেন্সি বা জরুরি অবস্থা। তা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত শাসন ব্যবস্থাকে দুমড়ে দিয়েছিল।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

স্বদেশ রায়
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৬:১৪
Share: Save:

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে রাজ্যের শাসকদলের চার নেতা-মন্ত্রীর গ্রেফতারি, রাজ্যপালের একের পর এক টুইট ও তার জেরে সোমবার সকাল থেকে রাজ্যবাসীর মনে উঁকি দিতে থাকা রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কা ৪৬ বছর আগের দুঃসময়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল।

১৯৭৫ সালের ২৫ মে দেশ জুড়ে জারি হয়েছিল ইমারজেন্সি বা জরুরি অবস্থা। তা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত শাসন ব্যবস্থাকে দুমড়ে দিয়েছিল। এই জরুরি অবস্থা ছিল অভ্যন্তরীণ । এর আগে দু’বার বাহ্যিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৬২ ও ১৯৬৫সালে, চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে।

১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারির পশ্চাদপটে ছিল অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি। ’৭১ সালের লোকসভা ভোটে ইন্দিরা গাঁধী ‘গরিবি হটাও’ ডাক দিয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। ১৯৭১ থেকে ’৭৪ সালের মধ্যে কতগুলি কাজ করেছিলেন তিনি যার মধ্যে ছিল ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ, আর্যভট্টের উৎক্ষেপণ ইত্যাদি। কিন্ত শেষরক্ষা করতে পারেননি। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে রায়বরেলী নির্বাচন খারিজ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে শুরু হয় জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘ভ্রষ্টাচার’-এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিচার-বিপ্লবের ডাক। ইন্দিরা পদত্যাগ না করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি করেন অজিতনাথ রায়কে। নির্বাচন বৈধ ঘোষণা করা হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় জয়প্রকাশ সামরিক বাহিনীকে বিদ্রোহ করার পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। হরতাল, ট্রেনের চাকা বন্ধ— এ সব হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে এই রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের পরামর্শে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া তা সমর্থন করেছিল। বিনোবা ভাবে ইন্দিরার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “জরুরি অবস্থা একটি অনুশাসন পর্ব।”

জরুরি অবস্থার কিছু ভাল দিক হয়ত ছিল, কিন্তু তা কার্যত ভারতে স্বৈরতন্ত্রী শাসন কায়েম করেছিল। তখন দেখেছি, ট্রেন সময়ে পৌঁছত, সরকারি দফতরে সময়ে হাজিরা, কালোবাজারির উপর খড়্গ নেমে এসেছিল। কিন্তু সেই সঙ্গে নেমে এসেছিল রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। দিল্লির তুর্কমান গেট থেকে সর্বত্র বুলডোজ়ার দিয়ে হকার্স কর্নার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজপরিবারের উপরে তল্লাশি নেমে আসে। জন্মনিয়ন্ত্রের নামে নাশবন্দির অত্যাচার। বিরেধিতার পথ রুদ্ধ। প্রচারমাধ্যম স্তব্ধ। সব সংবাদ প্রচারিত সরকারি ‘সমাচার’ হিসেবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের গলা চেপে ধরা হল। উৎপল দত্তের ‘দুঃস্বপ্নের নগরী’ নিষিদ্ধ হল। বিরোধী নেতা থেকে সাংবাদিক বা সাংস্কৃতিক কর্মীরা বিনা বিচারে আটক। নিট ফল? মেয়াদ শেষের আগেই, ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরা পরাজিত। ইতিহাস অন্যায় ভোলে না, ক্ষমাও করে না।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা

অন্য বিষয়গুলি:

Democracy History
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy