খেলা শুরুর প্রতীক্ষা। কৃষ্ণনগর জেলা স্টেডিয়ামে চলছে ঘাস কাটা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
রেললাইনের পাথর কুড়িয়ে প্রমাণ সাইজের মাঠের এক প্রান্ত থেকে ছুড়তেই তা সটান গিয়ে লাগল অন্য প্রান্তে চরতে থাকা ছাগলের মাথায়!
বছর সতেরোর ছেলের হাতের জোর এবং নিশানা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন সাইয়ের প্রশিক্ষক সুশান্ত রায়। অমিত মজুমদার বলে সেই ছেলেটিকে স্কুল স্পোর্টসে অবিশ্বাস্য জ্যাভলিন ছুড়তে দেখে নিজের ক্লাব বাদকুল্লা অনামীতে নিয়ে এসেছিলেন শিক্ষক হিমাদ্রী পাল। সেখান থেকেই যাত্রা শুরু অমিতের।
অমিতকে সুশান্ত নিয়ে যান তাঁর স্যার প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর প্রশিক্ষণ পেয়ে অমিত ২০১৪ সালে পাটিয়ালায় এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ট্রায়ালে ৭৪.৪৫ মিটার জ্যাভলিন ছুড়েছিলেন। ইতিমধ্যে সিনিয়র ন্যাশনালে একাধিক রুপো, ও ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি। কলকাতায় নীরজ চোপড়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নিজে সঙ্গে আনতে ভুলে যাওয়ায় নীরজের ‘এলবো গার্ড’ পরে ছুড়েছেন জ্যাভলিন। মিলেছে সরকারি চাকরি। চাকদহের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা অমিত পরিস্থিতির শিকার হয়ে এখন মাঠ থেকে দূরে। কিন্তু অ্যাথলেটিক্সের নদিয়া আজও তাঁকে নিয়ে গর্বিত।
এমন কত সফল নামের নামাবলি জড়ানো বাদকুল্লা অনামী ক্লাব, কৃষ্ণনগরের শ্রীরামকৃষ্ণ পাঠাগার, হালালপুর বিবেকানন্দ সংস্কৃতি সঙ্ঘ, তেহট্ট স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন, বেথুয়াডহরি অ্যাথলেটিক ক্লাব, সোনাখালি বকসা ওয়াইএমএ বা মণ্ডল পুকুরিয়া নবজ্যোতি সঙ্ঘের গায়ে। নদিয়ায় অ্যাথলেটিক্সের চর্চা এতটাই জোরালো যে জেলার প্রায় সমস্ত সংগঠনের কর্তারাই প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারেন— আমাদের ছাড়া রাজ্য আথেলেটিক্স অসম্ভব। বলার সঙ্গত কারণও আছে। ২০১৯ সালের পর গত দু’বছর করোনার কারণে যেখানে রাজ্য মিট হয়নি, সেখানে নদিয়ায় হাজারের উপর ছেলেমেয়ে নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়েছে। হয়েছে একাধিক রেকর্ড।
তেহট্ট স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের শিল্পী বিশ্বাস এ বার জেলায় শটপাটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাজ্যস্তরে যোগ্যতা অর্জন করেছেন। প্রায় দেড় দশক পর হাইজাম্পার আনোয়ার হোসেনের রেকর্ড ভেঙেছেন উচ্ছলকুমার রায়। যদিও ২০০১ সালের আদিত্য বিশ্বাসের ১০০ এবং ২০০ মিটারের রেকর্ড এখনও অক্ষত। হাইজাম্পে আকাশ বিশ্বাসও রাজ্য মিটে যাবেন। “এখনই নিয়মিত শতাধিক ছেলেমেয়ে অনুশীলন করে”— বলছিলেন সভাপতি সুমিত বিশ্বাস।
অনামী ক্লাবের অ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষক রঞ্জন দত্ত বলছেন, “ভাবতে গর্ব হয়, বাংলার হাঁটা প্রতিযোগিতার বেশির ভাগ সেরা প্রতিযোগী নদিয়ার অনামী ক্লাবের। ওদের ছাড়া বাংলা টিমই হবে না। দেবকুমার এ বার রেকর্ড করেছে, সাধনা মণ্ডল ২০১৮ সালে মেয়েদের হাঁটা প্রতিযোগিতায় ১৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করেছে। আবার অনূর্ধ্ব ১৬ বছরে হাঁটা প্রতিযোগিতায় অপু দত্ত রাজ্য স্তরের যোগ্যতামান অতিক্রম করেছে।” ক্লাবের অ্যাথলেটিক্স সম্পাদক সমীরকুমার দাস জানান, হেপ্টাথেলনে নতুন রেকর্ড করেছেন সুদেষ্ণা বিশ্বাস, ১০০ এবং ২০০ মিটারে জেলায় নতুন রেকর্ড করেছেন ফিরজুল মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy