দুই পরিবার মুচলেকা দেওয়ার পরেও যে তরুণ এবং নাবালিকার ‘বিয়ে’ হয়েছে বলে অভিযোগ, তাদের বোঝাতে গিয়েছিল সরকারি দল। তবে বৃহস্পতিবার। ‘বিয়ে’ হওয়ার তিন দিন পরে। শুক্রবার রানাঘাট-২ ব্লক শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক (সিডিপিও) কিরণচন্দ্র ঢাকাই বলেন, “মেয়েটিকে আমরা বুঝিয়েছি। দুই পরিবারের সদস্যদেরও জানিয়েছি যে, এই বয়সে বিয়ে করা যায় না।” তাঁর সংযোজন: “বিয়ের কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি।” তবে ওই তরুণ বলেন, “স্ত্রীর আঠারো বছর বয়স হলে, আমাদের বাড়িতে আসবে।”
নদিয়ার ধানতলা থানা এলাকায় মন্দিরে ষোলো বছরের কিশোরীর সঙ্গে বছর উনিশের ওই তরুণের বিয়ে হতে চলেছে— এই খবর পেয়ে পুলিশ তা বন্ধ করেছিল। পাত্র এবং কন্যা পক্ষকে থানায় নিয়ে গিয়ে ‘নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হবে না’ বলে লেখানো হয়েছিল মুচলেকাও। কিন্তু থানা থেকে বেরিয়েই সোমবার দু’পক্ষ ‘চার হাত এক’ করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। বুধবার বৌভাতও হয় বলে পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রের দাবি। তরুণের মা বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, “ছেলে ভুল করে বিয়ে করে ফেলেছে। তাই ভাত-কাপড়ের আয়োজন করেছিলাম।”
আগে থেকে খবর থাকলেও নাবালিকার বাড়িতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছতে সরকারি আধিকারিকদের তিন দিন সময় লাগল কেন? সিডিপিও বলেন, “পুলিশ বিয়ে আটকেছে বলেই জানানো হয়েছিল। বিয়ে হয়েছে কি না, নিশ্চিত হতেই দু’পক্ষের বাড়িতে যাওয়া।”
শুক্রবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, তরুণ ও নাবালিকা যে, যার বাড়িতে রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেন, নাবালিকাকে শাঁখা-পলা পরা বা সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়া অবস্থায় এ দিন দেখা যায়নি। ওই তরুণ বলেন, “স্ত্রী বাপের বাড়িতেই আছে। আঠারো বছর বয়স হলে, আমাদের বাড়িতে আসবে।” তার পরেই তাঁর সংযোজন, "আমাদের সে ভাবে বিয়ে হয়নি।” নাবালিকা বা তার পরিবার মন্তব্য করতে চায়নি।
রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের অন্যতম উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “বিষয়টির উপরে আমাদের নজর রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের প্রতিনিধিরা গ্রামে গিয়ে বিষয়টি সরেজমিনে দেখবেন।”
যে মন্দিরে ‘বিয়ে’ হয়েছিল বলে দাবি, পুলিশ সেই মন্দির লাগোয়া এলাকার নজরদারি ক্যামেরার ‘ফুটেজ’ সংগ্রহ করে, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)