প্রতীকী ছবি।
এলাকার বড় পুজো। প্রথা মেনে এলাকার মানুষই পুজো করেন। এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবার চাঁদা দিয়ে সেই পুজো পরিচালনা করেন। বাইরের কারও কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয় না। পুজো কমিটির দাবি মেনেই পরিবারেগুলোকে চাঁদা দিতে হয়। তার অন্যথা হলেই গেল।
বেলডাঙা পুরসভা এলাকার ২০০ বছরের বেশি প্রাচীন কালী পুজো ঘিরে এই প্রচ্ছন্ন নির্দেশ যেন হুকুমের কাজ করত। পুজোর কয়েক দিন আগেই চাঁদার বরাদ্দ জানিয়ে দেওয়া হত বাড়িতে বাড়িতে।
সেই নির্দেশ পৌঁছেছিল এক দরিদ্র পরিবারেও। কিন্তু ওই পরিবার এতো বেশি চাঁদা দিতে সম্মত নয় বলে জানিয়ে দেয়। তারা নিজেদের সামর্থ্য মতো চাঁদা দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তাতে পুজো কমিটি রাজি হয়নি। স্থানীয় মোড়লদের নির্দেশ ছিল, দরকারে বাড়ির প্রয়োজনীয় বাসন, ছাদের কড়ি বরগা বিক্রি করেও চাঁদার দাবি মেটাতে হবে। কিন্তু এত চাপেও দাবি মতো চাঁদা না মেলায় মোড়লরা বিচারসভা করে ফরমান জারি করেন। সেখানে বলা হয় দাবি মতো চাঁদা না মেলায় তাদের দোষ হয়েছে। শাস্তি স্বরূপ ওই পরিবারকে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
যারা অভাবে চাঁদা দিতে পারেনি তাদের আবার জরিমানা!
এটাও সেই পরিবার দিতে পারেনি। তাতে ক্ষিপ্ত হয় সমাজের মাতব্বররা। এর পর ওই পরিবারকে অপমান করে কয়েক জন। সেই অপমান সহ্য না করতে পেরে আত্মঘাতী হন পরিবারের এক তরুণী।
এর পর ঘটনার বিবরণ পৌঁছয় পুলিশের কানে। পুলিশ ১০ জনেরও বেশি মোড়লকে গ্রেফতার করে। তাদের জেলও খাটতে হয়।
প্রায় ১৬ বছর আগে বেলডাঙার বাগদিপাড়া এলাকার এই ঘটনা আজও ভুলতে পারেনি এলাকার মানুষ। তাঁদের মনে পড়ে, দিনের পর দিন একটি গরিব পরিবারকে কী করে গ্রামের মোড়লরা অপমানের অন্ধ গলির দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কোনও কতা বলতে পারেননি। প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপরেও সালিশি বসিয়ে আক্রমণ করা হতে পারে বলে ভয় ছিল।
তার কয়েক বছর পর বেলডাঙার পহপার গ্রাম। সেখানে সমাজের অনুশাসনকে মানদণ্ড করে সালিশি সভা বসানো হয়। গ্রামের দুই তরুণ- তরুণী নিজেদের মধ্যে ভালবেসে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গ্রামে তখন উঁচু জাত, নিচু জাত নিয়ে চর্চার অভাব ছিল না। গ্রামের মোড়লরা সেই চর্চা করতেন। মণ্ডল পরিবারের সঙ্গে হালদার পরিবারের বিয়ে তাঁরা মানতে পারেননি। এটা গ্রামের ভাষায় অনাচার। কিন্তু এই অনাচার তো মুখবুজে সহ্য করবেন না মাতব্বররা। তারা গ্রামে বিচারভা করে ওই দম্পতিকে তাঁদের পরিবার ও সমাজ থেকে আলাদা করে দেয়। সামাজিক বয়কটের মুখে পরে দাম্পত্যজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
তবে এরও অনেক আগের একটি ঘটনা বেলডাঙা ২ ব্লকের শক্তিপুর ও পাশের লোহাদহ এলাকার মানুষের মুখে মুখে ঘোরে। এক মাঝি নিজের নৌকা না থাকায় কামনগর গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে একটি নৌকো লিজ নেন। কিন্তু অভিযোগ সেই মাঝি ঠিক মতো টাকা দিতেন না। উপরন্তু টাকা চাইতে গেলে কটু কথা শুনতে হতো। এক দিন টাকা না পেয়ে নৌকার মালিক কয়েক জনকে নিয়ে গিয়ে নৌকা তুলে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু সেই মাঝির নির্দেশে তার ছেলেরা সাঁতরে জল পথে তাঁদের ধাওয়া করে। তাঁদের মারধর করে। তাঁদের মধ্যে একজন বৃদ্ধও মার খায়। এই ঘটনার পর গ্রামে সালিশি সভা বসে। সিদ্ধান্ত হয় যে যুবক বৃদ্ধকে মেরেছে তাকে ওই বৃদ্ধের জুতো নিয়ে গ্রামের রাস্তায় ঘুরতে হবে। ওই বৃদ্ধের কাছে গিয়ে মাথায় জুতো রেখে ক্ষমা চাইতে হবে। গ্রামের সব পাড়ায় ঘোরার পর গ্রামের মোড়লরা তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন। সেই মতো ওই যুবক ওই বৃদ্ধের জুতো মাথায় নিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চান। তাতে তাঁর ‘অপরাধ’ মার্জনা করা হয়।
গ্রামের মানুষের বক্তব্য, পুলিশের কাছে তখন এত সহজে পৌঁছনো যেত না। তাই মোড়লদের এত রমরমা ছিল। এখন পরিস্থিতি বদলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy