সেই ‘চায়না’ রসুন। বেতাইয়ে। নিজস্ব চিত্র ।
বাজারে ছেয়ে গেলেও কোথা থেকে আসছে ‘চায়না’ রসুন তা নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা যেমন ধোঁয়াশায়, তেমনই ক্রেতারাও। এই রসুন বিক্রি বন্ধে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও নির্দেশিকা না আসায় অস্বস্তিতে পড়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। আবার এই রসুনের বিক্রি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় চাষিদের মধ্যে। ক্ষুব্ধ চাষিদের কেউ কেউ বাজারে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি বিক্রেতাদের থেকে ‘চায়না’ রসুন তুলে এনে জমা দিয়েছে পুলিশের কাছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তেহট্ট থানার পুলিশও বাজারে হানা দিয়ে ‘চায়না’ রসুন বাজেয়াপ্ত করেছে। এ বার সেই বস্তা বস্তা রসুন নিয়ে কী করা হবে তা নিয়ে কার্যত ধন্ধে পুলিশ। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে উদ্যানপালন দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ।
সম্প্রতি বাজার ছেয়ে গিয়েছে ‘চায়না’ রসুনে। তেহট্ট, বেতাই, করিমপুর, কৃষ্ণনগর সহ প্রায় গোটা জেলা জুড়েই বাজারে দেখা মিলছে মোটা কোয়া ও ধবধবে সাদা এই রসুনের। দেশি রসুনের থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে এই রসুন বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এই রসুন কোথা থেকে আসছে কোথায় উৎপন্ন হচ্ছে তা নিয়ে কার্যত ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যে। বিক্রেতাদের কেউ কেউ অবশ্য দাবি করছেন, ‘এই রসুন আসছে চিন থেকে। যে কারণে এর নাম ‘চায়না’ রসুন। তেহট্টের একাধিক বাজারের রসুন বিক্রেতারা জানিয়েছেন যে, এই ‘চায়না’ রসুন আসছে জেলা সদর কৃষ্ণনগর থেকে। তবে বুধবার কৃষ্ণনগরের আদা-রসুনের বাজারে ঢুঁ মেরে অন্যান্য দিনের থেকে ‘চায়না’ রসুন খুবই কম দেখা মিলেছে। ‘চায়না’ রসুন নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই রাতারাতি যেন বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছেন, দেশি বা সাধারণ রসুনের সঙ্গেই ‘চায়না’ রসুন তাঁদের কাছে আসছে। জানা গিয়েছে, কৃষ্ণনগরের লালদিঘির বাজার ও ঘূর্ণী এলাকার কয়েক জন রসুনের পাইকারি ব্যবসায়ী এই রসুন নিয়ে এসে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রসুনের পাইকারি ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, এই রসুন আসছে ‘চায়না’ থেকে। উত্তরবঙ্গের নকশালবাড়ি এলাকায় নেপাল সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতে ঢুকছে এই রসুন। সেখান থেকে চলে আসছে শিলিগুড়ি। তার পর শিলিগুড়ি থেকে মূলত বাসের মাথায় করে ছড়িয়ে পড়ছে নদিয়া-সহ প্রায় গোটা রাজ্যেই। এ ছাড়া নদিয়ার গেদে সীমান্ত দিয়েও এই রসুন ভারতে ঢুকছিল। তবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিএসএফের নজরদারি কড়াকড়ি হওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্তে দিয়ে চোরাই পথে এই রসুন আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার দাবি করছেন, নেপালের পার্বত্য এলাকাতেও এই রসুনের চাষ হচ্ছে। এটা মূলত হাইব্রিড রসুন বলে তাঁদের দাবি।
এই রসুন মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নয় বলে উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তবে এই রসুনের সঙ্গে ক্ষতিকারর জীবাণু দেশে ঢুকে পড়ে স্থানীয় রসুন চাষে ক্ষতি করতে পারে। তবে মানব শরীরে ক্ষতিকারক না-হলেও হোটেল বা অনুষ্ঠান বাড়িতে এই রসুন ব্যবহারে অনীহা তৈরি হয়েছে। তেহট্টের একটি হোটেলের মালিক সুবর্ণ মণ্ডল বা অনুষ্ঠান বাড়ির রাঁধুনি বুদ্ধদেব হালদারেরা বলছেন, ‘‘এই রসুন ব্যবহার করায় লাভ কিছু হচ্ছে না। কারণ এতে ঝাঁজ একেবারেই কম। ফলে পরিমাণে অনেক বেশি লাগে। তরকারির স্বাদেও তেমন প্রভাব ফেলে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy