Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Nadia

Nadia: দোকান, বাড়ি আর মেয়ে একাই সামলান ফুলি

এই পুরুষ-নির্ভর সমাজে নানা বাধ্যবাধকতার মধ্যে একজন একাকী মায়ের পক্ষে কন্যাসন্তানকে বড় করে তোলার কাজটা সহজ নয়।

n সোমবার দোকানে কাজে ব্যস্ত উমাবতী মাহান্ত। নিজস্ব চিত্র

n সোমবার দোকানে কাজে ব্যস্ত উমাবতী মাহান্ত। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপ পাল
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ০৬:১৭
Share: Save:

লড়াই মোটেও সহজ ছিল না। তাই বলে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাননি। জানতেন, এই পুরুষ-নির্ভর সমাজে নানা বাধ্যবাধকতার মধ্যে একজন একাকী মায়ের পক্ষে কন্যাসন্তানকে বড় করে তোলার কাজটা সহজ নয়। তার পরেও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন স্বামী-বিচ্ছিনা একাকী মা।

তিনি কালীগঞ্জের দেবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের উমাবতী মাহান্ত। এলাকায় পরিচিত ফুলি নামে। কম বয়সে বিয়ে। তার উপরে আচমকা বদলে যাওয়া সংসার। বহু প্রতিকূলতার পরেও অদম্য জেদ আর পরিশ্রমকে সঙ্গী করে সন্তানকে বড় করেছেন। স্ব-উপার্জিত টাকায় জায়গা কিনে ঘরও করেছেন। ফুলি নিজে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য। ওই গোষ্ঠীর থেকে ব্লক অফিসে চায়ের দোকান দেওয়া হয়। বর্তমানে সেই চায়ের দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন ফুলি। মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। একাকী মায়ের লক্ষ্য একটাই—মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলা।

ফুলি চান, তাঁর মেয়েও একা বাঁচার সাহস রাখুক। শুধু পড়াশোনা শিখে বড় হওয়া নয়, এলাকার সব মেয়েদের সাহস জোগানোর কাজেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুক তাঁর সন্তান।

২০০৫ সালে কালীগঞ্জ ব্লকের দলুইপুরে বিয়ে হয় ফুলির, এলাকার এক শিক্ষকের সঙ্গে। শুরুতে সব ঠিক থাকলেও সুখের সংসারে চিড় ধরে বছর পেরোতেই। স্বামীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে শুরু হয় অশান্তি। পরে দুই বছরের কন্যাসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন ফুলি। সে সময়ে পুলিশ-আদালত হয়। সেই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া এখনও চলছে।

এর পরেই শুরু একা মায়ের সন্তান বড় করার যুদ্ধ। প্রথমে বাপের বাড়িতে ঠাঁই মিললেও নিজের মন থেকে এই অবলম্বনের জীবন মেনে নিতে পারছিলেন না ফুলি। ঠিক করেন—নিজে স্বনির্ভর হবেন। বাপের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে দেবগ্রামে একটি জায়গায় নিজের ঘর তৈরি করেন। উমাবতী ওরফে ফুলি বলেন, ‘‘পুরো জীবন বাপের বাড়িতে থাকা আমার ঠিক মনে হয়নি। তাই এক সময়ে বেরিয়ে আসি। তবে বাবা, ভাই খুব সাহায্য করেছে।’’

তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মেয়েরা খেলনা নই, চাইলে আমরাও নিজের জোরে জীবনটা বাঁচতে পারি। এখন আমার স্বপ্ন একটাই— মেয়েকে পড়িয়ে বড় করতে চাই।’’
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ থেকে সংসার খরচ চলে মা-মেয়ের। তাই সকাল হতেই যুদ্ধ শুরু হয় ফুলির। বাড়ির কাজকর্ম গুছিয়ে পৌঁছে যান দোকানে। সেখানে চা বানানোর প্রস্তুতি, টিফিনের খাবার রুটি-তরকারি তৈরি। তার সঙ্গে সঙ্গে চলে দোকানের জেরক্স মেশিন। বাড়ি-বাইরে সবটাই সামলে নেন একাকী মা।
ফুলি বলেন, ‘‘অফিসের সবাই আমায় ভালবাসে। অনেকে মজা করে ফুলনদেবীও বলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy