Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

ফল উৎসবে উচ্ছ্বসিত খুদে পড়ুয়ারা

এ দিন প্রথম পাতে পড়ল খেজুর। তার পরে পেয়ারা, আনারস, কাঁঠাল।

ফলে-ফলে: ঘোড়াপাখিয়া বিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

ফলে-ফলে: ঘোড়াপাখিয়া বিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

সিমন দাস ও খুশি নুনিয়াকে ঘিরে ছেঁকে ধরেছে ভিড়টা। দু’জনেরই মাথায় টুপি, হাতে চকলেট আর রং-পেনসিল। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র সিমন দাস ও প্রথম শ্রেণির ছাত্রী খুশি নুনিয়ার দু’জনেরই জন্মদিন ছিল ২৬ জুলাই, শুক্রবার। একটু পরেই পড়ুয়াদের সঙ্গে গলা মেলালেন শিক্ষক শিক্ষিকারাও— হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।

ঠিক তখনই নিজের গাছের পাকা কাঁঠাল নিয়ে স্কুলে ঢুকলেন মৌসুমী দাস। সুতির ঘোড়াপাখিয়া ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়েই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তাঁর ছেলে শিবম। মৌসুমী শিক্ষকদের বলেন, ‘‘গাছে অনেক কাঁঠাল ধরেছে এ বার। তাই এগুলো স্কুলের জন্য দিতে এলাম। মিড ডে মিলে সবাইকে দেবেন।’’ সেই কাঁঠাল খাওয়ানোর ভাবনা থেকেই শিক্ষকেরা শনিবার ঘটা করে স্কুলে পালন করলেন ‘ফল উৎসব’। কাঁঠালের সঙ্গে বাজার থেকে আনা হল আনারস, পেয়ারা, খেজুর। আর উৎসবের উৎসাহে ১৭২ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে শনিবার স্কুলে হাজির ১৫৪ জন। মিডডে মিলের বদলে স্কুলের ডাইনিং হলে খুদেরা মহানন্দে খেল মরসুমি ফল।

এ দিন রাঁধুনিদেরও কেউ ব্যস্ত ছিলেন কাঁঠালের কোয়া ছাড়াতে, কেউ ব্যস্ত ছিলেন আনারস কাটতে। শনিবার টিফিনেই পড়েছিল ছুটির ঘণ্টা। তার পরেই শুরু হয় ফল উৎসব।

এ দিন প্রথম পাতে পড়ল খেজুর। তার পরে পেয়ারা, আনারস, কাঁঠাল। এ দিন রাঁধুনিদের সঙ্গে খাবার পরিবেশন করলেন শিক্ষক, শিক্ষিকারাও। মিডডে মিলের বদলে ফলের উৎসব তখন জমিয়ে তুলেছে ছাত্রছাত্রীরাই।

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মুকুলের বায়না, “ও স্যর, আমার আরও দু’পিস আনারস চাই।” আর এক প্রান্ত থেকে সৌগত চিৎকার শুরু করেছে, “মাসী, দু’পিস বেশি করে পেয়ারা দাও।” শুক্রবার কাঁঠাল দেখে নাক সিঁটকেছিল খাদ্যমন্ত্রী মোনালিসা প্রামাণিক, ‘‘আমি কিন্ত্ু স্যর কাঁঠাল খাই না।” শনিবার সেই মোনালিসাই হেড স্যরকে বলেছে, “আমাকে আরও তিন কোয়া কাঁঠাল দিন। হতবাক প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাস, ‘‘সে কী রে, তুই যে বলেছিলি কাঁঠাল খাস না!” মোনালিসা হাসছে, ‘‘স্যার এটা দারুণ কাঁঠাল। খুব মিষ্টি।”

প্রধান শিক্ষক বলছেন, “প্রত্যন্ত গ্রাম। বেশির ভাগ পড়ুয়াই আসে দিনমজুর পরিবার থেকে। উৎসব বলতে দুর্গাপুজো। বাড়িতে ফল তো সেরকম আসে না। স্বাধীনতারও আগে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমি ১৪ বছর এই স্কুলে আছি। এই প্রথম আমরা এ ধরনের উৎসব করলাম। শুক্রবার স্কুলে কাঁঠাল আসতেই এই ভাবনাটা মাথায় আসে।”

স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুমন্ত দাস বলছেন, “আমাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্মদিন পালনের রীতি চালু রয়েছে। এই তো সে দিন বর্ণালীর জন্মদিনে ওর বাড়ি থেকে এক হাঁড়ি পায়েস দিয়ে গিয়েছিলেন ওর মা। মিডডে মিলের শেষ পাতে সেই পায়েস খেল ছাত্ররা। মোনালিসার জন্মদিনে তো স্কুলে মিডডে মিলের সঙ্গেই বিশেষ মেনু মাংসের আয়োজন করে ওর পরিবার। আসলে গোটা গ্রামটাই জড়িয়ে পড়েছে স্কুলের সঙ্গে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Students School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy