Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Fraud

লিঙ্ক নেই, এখন যান, তার পরেই সব টাকা উধাও ব্যাঙ্ক থেকে! কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ নদিয়ায়

গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের কর্ণধারের বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরতের দাবি জানানো হলে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর বাড়ির লোকেরাও পলাতক বলে দাবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রণয় ঘোষ
তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৫৩
Share: Save:

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপ দিয়েও মিলত না টাকা। ‘লিঙ্ক নেই, অন্য দিন আসুন’ জানিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত গ্রাহকদের। পরে টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকেরা জানতে পারলেন, তাঁদের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে! এ ভাবে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল নদিয়ার তেহট্ট থানা এলাকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। অন্তত ১ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে বলে দাবি গ্রাহকদের। গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের কর্ণধারের বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরতের দাবি জানানো হলে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা গিয়েছে। এর পর তেহট্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রায় ২০০ গ্রাহক। অভিযোগ জমা পড়ার কথা জানিয়েছেন কৃষ্ণনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কৃশানু রায়।

এলাকায় ৩ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা না থাকায় বছর পাঁচেক আগে ধোপট্ট গ্রামে সরকারি উদ্যোগে ব্যাঙ্কের একটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালু হয়। অনিমেষ প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তি ওই পরিষেবা কেন্দ্রের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন। ৫ হাজারেরও বেশি গ্রাহকের আমানত রয়েছে ওই পরিষেবা কেন্দ্রে। বিদেশে বা ভিন্‌রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাড়ির জন্য টাকা পাঠালে ওই কেন্দ্র থেকে টাকা তুলে আনেন পরিবারের লোকেরা। এ ছাড়া একশো দিনের কাজের টাকা, বিভিন্ন সরকারি ও সামাজিক প্রকল্পে প্রাপ্ত ভাতা, স্টুডেন্ট স্কলারশিপের টাকার লেনদেন হয় ওই পরিষেবা কেন্দ্র থেকে। কিন্তু গত মাস ছয়েক ধরে বন্ধ সেই লেনদেন।

গ্রাহকদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা টাকা তুলতে পারছেন না। পরিষেবা কেন্দ্র গেলেই ‘লিঙ্ক নেই’ বলে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে টাকায় সংসার চলে, সেই টাকা দিনের পর দিন আটকে থাকায় বেজায় সমস্যায় পড়ে মাসখানেক আগে কয়েক জন গ্রাহক অন্য একটি শাখা থেকে টাকা তুলতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ। দেখেন, অ্যাকা‌উন্টে এক পয়সাও নেই! রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, এলাকার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থেকেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে তাঁদের টাকা তোলা হয়েছে।

জালেমন বিবি নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘‘শেষ বার টাকা তুলেছি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার পর যত বার গিয়েছি, ফিরে এসেছি। টাকা তুলতে পারছি না।’’

গোপাল বিশ্বাস নামে আর এক গ্রাহক বলেন, ‘‘যত বার টাকা তুলতে যেতাম, অনিমেষ আঙুলের ছাপ দিতে বলতেন। আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরেই বলতেন, ‘লিঙ্ক নেই, বাড়ি যাও।’ পরে ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে দেখি আমাদের সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’

বিদেশ থেকে দেড় লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন স্বামী। সেই টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি শুকিয়া বিবির। তাঁর কথায়, ‘‘দেড় লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিল স্বামী। সেই টাকা তুলতে পারছি না। আমি এখন সর্বস্বান্ত! আমাকে অনিমেষবাবু বললেন, আধার কার্ড আর আঙুলের ছাপ দিলেই টাকা উঠে যাবে। সেই মতো আধার কার্ড নিয়ে গিয়ে আঙলের ছাপ দিই। অনিমেষ জানালেন, লিঙ্ক নেই। দু’দিন পরে আসুন। পরে ব্যাঙ্কে খোঁজ নিয়ে দেখি, সব টাকা আত্মসাৎ করেছে!’’

গ্রাহকদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। অনিমেষের কাছে গিয়ে টাকার দাবি করা হলে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার করেন। বর্তমানে তিনি তেহট্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর থেকে তাঁর বাড়ির লোকেরাও পলাতক। গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে অনিমেষের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন গ্রাহকদের কাছে। আর কোনও উপায় না দেখে শেষমেশ তাঁরা সম্মিলিত ভাবে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন থানায়।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘একক ভাবে কোনও গ্রাহকের অভিযোগ পাইনি। তেহট্ট থানায় গ্রাহকেরা সম্মিলিত ভাবে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy