Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

চার দিন পর বাড়ির কাছে পৌঁছতে পথ রুখল পুলিশ

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজারমা বাবা আর তিন ভাইয়ের সংসার। দুই দাদাও মুম্বাইতে থাকে। প্রথম প্রথম নির্মাণ শিল্পে রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করতাম।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

হাসমত শেখ
লক্ষ্মণপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৫:৩৭
Share: Save:

২০১৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরে আর কলেজে ভর্তি হইনি। লেখাপড়ার খরচ রয়েছে। পাশাপাশি মনে হয়েছিল, ডিগ্রি নিয়েই বা কী হবে? ২০১৬ সালে চলে গিয়েছিলাম মুম্বই। এক বছর পরপর বাড়ি ফিরতাম। এবার যেমন আগেই চলে এলাম। লকডাউনের জেরে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় করোনা আবহে বাড়ি ফিরলাম।

মা বাবা আর তিন ভাইয়ের সংসার। দুই দাদাও মুম্বাইতে থাকে। প্রথম প্রথম নির্মাণ শিল্পে রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করতাম। মাসে হাজার বিশেক টাকা রোজগারও হত। করোনার জন্য লকডাউন শুরু হয় দেশ জুড়ে। সেই সময় মালিক বললো লকডাউন উঠে গেলে তারপর আবার কাজ শুরু হবে।

তখন এক অস্বাভাবিক অবস্থা। বাইরে মুদির দোকান খোলা, আনাজের বাজার খোলা পকেটে তখনও কিছু টাকা ছিল। কিন্তু পুলিশের রাঙা চোখ এড়িয়ে খাবার কিনে আনার সাহস ছিল না। যে দুচারজন বেরিয়েছিল সাহস করে তারা ফিরে আসত হয় খোঁড়াতে খোঁড়াতে না হয় রক্ত ঝরাতে ঝরাতে। দিন পনের কুড়ি এভাবেই কাটল। জমানো টাকা পয়সায় টান পড়ছে দেখে একসময় অল্প অল্প করে বাজার হাট করতে শুরু করলাম। অবশেষে সেটুকুও নিঃশ্বেষ হয়ে গেল। ততদিনে বাড়ি ফিরে আসব ঠিক করে ফেলেছি। একে রোজার সময় তার ওপর সারাদিন পরে সন্ধ্যেবেলা নামাজ শেষে একটু জলমুড়ি কোনদিন তরমুজ খাওয়া। সেই খেয়ে দিন চলে? ঠিক করলাম আমাদের কথা আমাদের জেলার মানুষের কাছে পৌছে দিতে হবে। সেই মতো ভিডিয়ো করলাম। শেয়ার করলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখানেও কিছু সুরাহা হল না। খুড়তুতো ভাইকে ফোন করলাম সরাসরি। প্রথম ধাপে হাজার পাঁচেক টাকা পাঠাল দাদা।

পাশাপাশি দুটি কলোনিতে থাকতাম পাশের গ্রামের বন্ধুরা। সবাই এক জায়গায় হলাম। মাথাপিছু চার হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করলাম চোদ্দ চাকার গাড়ি। মুম্বাইয়ের হিরানন্দিনী থেকে পঞ্চাশ জন উঠে রওনা দিলাম বাড়ি ফেরার উদ্দেশে। টানা চারদিন গাড়ি চেপে এসেছি। খিদে তেষ্টায় গলা শুকিয়ে গিয়েছে। রাস্তায় আমাদের দেখে কোথাও কোথাও খিচুড়ি খাইয়েছে কেউ কেউ। কেউ আবার পাঁউরুটি, কলাও দিয়েছে।

দিনের বেলা পুলিশ অত্যাচার করে বলে লরির চালক চেষ্টা করত রাতের মধ্যে বেশি পথ পার করতে। যখন খড়গ্রাম কুলিতে ঢুকছি পথ আটকাল আমার জেলার পুলিশ। জানতে চাইল কেন ফিরে এলাম ভিন্ রাজ্য থেকে। আটকে রাখল কয়েক ঘণ্টা। তারপর অবশ্য সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে যে যেমন পারল বাড়ির দিকে পা বাড়াল।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy