মুশকিল আসান: বিলাসপুরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
গ্রামের মোড়ে টেবিল চেয়ার পেতে বসে আছেন জনা দশেক যুবক। তাঁদের ঘিরে একটা বড় জটলা। যাঁরা বসে আছেন তাঁরা কেউ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, কেউ গৃহশিক্ষক, কেউ আবার কেটারিং সংস্থার কর্মী। ডোমকলের বিলাসপুরের ওই যুবকেরা গত কয়েক দিন ধরেই গ্রামের লোকজনের কাছে হয়ে উঠেছেন মুশকিল আসান।
চারদিকে এনআরসি-আতঙ্কে রয়েছেন বহু লোকজন। আর সেই সুযোগে কেউ কেউ দু’লাইন লিখে দিয়ে বা একটা ফর্ম পূরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঠিক সেই সময়ে বিলাসপুর গ্রামের ওই যুবকেরা পাশে দাঁড়িয়েছে গ্রামের অসহায় মানুষের। সকালে ঘণ্টা দুয়েক, আর সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাঁরা মানুষকে অভয় দিছেন। নথিপত্রে কোথায় কী ভুল আছে সেটা ভাল করে দেখে, ভরে দিচ্ছেন ফর্মও।
পরিবারের কাজ, স্কুলে দীর্ঘ সময় দেওয়ার পরে হঠাৎ এমন উদ্যোগের কারণ কী? গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলছেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে যা চলছএ তা তো বুঝতেই পারছেন। লোকজন বড় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় গ্রামের লোকজনের পাশে না দাঁড়ালে চলে? এমনিতেই গ্রামের কিছু লোকজন বাড়িতে তাঁদের কাগজপত্র নিয়ে ভিড় করছিলেন। তার পরে বন্ধুরা মিলে ঠিক করি, সকলে মিলে গ্রামের মোড়ে বসে আড্ডার মেজাজেই কাজটা করব। সেই মতোই চলছে। লোকজনও সাহস পাচ্ছেন। আমরাও ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছি। কাগজপত্রে কিছু ভুল থাকলে সে ব্যাপারেও তাঁদের কী করণীয় তা-ও বলে দিচ্ছি।’’
গৃহশিক্ষকতা করেই সংসার চলে রবিউল ইসলামের। তিনিও সন্ধ্যা হলেই বসে পড়ছেন গ্রামের ‘এনআরসি টেবিল’-এ। তাঁদের সঙ্গ দিচ্ছেন, ড্যানি, মিলন, সুমন। সুমন মণ্ডল বলছেন, ‘‘সন্ধ্যার পরে আড্ডা দিয়েই সময় কাটাই। এই ক’টা দিন না হয় গ্রামের লোকজনের একটু কাজ করে দিলাম!’’
ডোমকল-বহরমপুর রাজ্য সড়ক থেকে কিছুটা নেমে গিয়েই গ্রামের জমজমাট মোড়। সেখানেই সকাল- সন্ধ্যা টেবিল-চেয়ার পেতে বসে পড়ছেন ওঁরা। শিক্ষক মুস্তাক আহমেদ বলছেন, ‘‘গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর পাশে এই সময়ে না দাঁড়াতে পাড়লে লেখাপড়াটা যে ষোলো আনাই বৃথা।’’ গ্রামের গিয়াসউদ্দিন, আদু মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘বেঁচে থাক ওরা। ছেলেগুলো না থাকলে খুব বিপদে পড়ে যেতাম। ওরাই সব মুশকিল আসান করে দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy