death. —প্রতীকী ছবি।
কল্যাণীতে হোটেলের ঘরে ধনেখালির বিজেপি নেতা সুদীপ ঘোষের অপমৃত্যুর মামলায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর বাবা। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, মত্ত অবস্থায় গলায় বেডশিটের ফাঁস দিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে আত্মঘাতী হয়েছেন বছর সাঁইত্রিশের ওই যুবক।
সোমবারই বুদ্ধপার্ক এলাকার ওই হোটেলের তরফে নদিয়ার কল্যাণী থানায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জমা দেওয়া হয়েছে। সেই ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সুদীপের বাবা সুফলচন্দ্র ঘোষ এ দিন পুলিশি তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে সিবিআই তদন্ত দাবি করেন। তাঁর দাবি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়েছেন ধনেখালিতে বিজেপির ২ মণ্ডল সভাপতি সুদীপ। আর, তা আড়াল করতেই এক মহিলার নাম জড়ানো হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি তা-ই হয়, তবে হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে আমার ছেলের সঙ্গে ওই মহিলাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?’’ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পায়নি। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কন্ননকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
হোটেল সূত্রে পুলিশ জেনেছে, শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ হোটেলের কর্মী বিশ্বজিৎ হালদারকে ফোন করে প্রায় সুদীপেরই সমবয়সি এক মহিলা তাঁর খোঁজ নিতে বলেন। তা জেনে হোটেলের ম্যানেজার এক কর্মীকে খোঁজ নিতে পাঠান। সেই কর্মী ২০৯ নম্বর ঘরের ভেজানো দরজা ঠেলে দেখেন, সুদীপ গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছেন। প্রশ্ন উঠছে, ঘরের দরজা ভেজানো ছিল কেন? কেউ কি সাধারণত দরজা ভিতর থেকে বন্ধ না করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে? না কি, কেউ সুদীপকে খুন করে দরজা টেনে দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল? পুলিশের দাবি, সুদীপ প্রায় কখনই দরজা ‘লক’ করতেন না বলে হোটেলের কর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে জানিয়েছেন।
সুদীপ আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন বলে কেন মনে করছেন তদন্তকারীরা?
পুলিশ সূত্রের দাবি, যে মহিলা ওই রাতে হোটেলে ফোন করেছিলেন তিনি আদতে নদিয়ারই মদনপুর এলাকার আলাইপুরের বাসিন্দা। তিনি বিধবা, একটি মেয়ে আছে। হুগলির চুঁচুড়ায় এক পানশালায় তিনি গান করেন, তারই কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করে থাকেন। সেখানেই সুদীপের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। মহিলার দাবি, সুদীপ তাঁকে সংসার করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু তিনি তা চাননি। এই নিয়ে টানাপড়েন চলছিল। সুদীপের মোবাইল ফোনও পুলিশ পেয়েছে। তবে শেষ ফোন কার কাছে গিয়েছিল, কতক্ষণ কথা হয়েছিল, পুলিশ তা জানাতে চায়নি।
হোটেলে তদন্ত করে পুলিশ জেনেছে, গত বৃহস্পতিবার সুদীপ তাঁর ঘরের পাশে ২১০ নম্বর ঘর ওই মহিলার নামে ‘বুক’ করেছিলেন। যদিও ওই রাতে মহিলা ২০৯ নম্বর ঘরেই ছিলেন। পাশের ঘরে ছিলেন তাঁর সঙ্গে আসা পরিজনেরা। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওই মহিলা ও তাঁর পরিজনেরা হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যান। পরে মহিলা সুদীপকে ফোন বাড়ি ফিরে যেতে বলেন বলেও তাঁর দাবি। যদিও সুদীপ তা শোনেননি।
পুলিশ সূত্রের দাবি, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চুঁচুড়ার পানশালায় সুদীপের সঙ্গে মহিলার পরিচয় হয়। তাঁর ফোন নম্বর নেন সুদীপ। কথাবার্তা হতে হতে ‘বন্ধুত্ব’ গড়ে ওঠে। মহিলার দাবি, পরে তিনি জানতে পারেন যে সুদীপ বিবাহিত, তাঁর একটি শিশু সন্তানও রয়েছে। মাঝে-মধ্যে রাতে মত্ত অবস্থায় বাড়িতে অশান্তির কথা জানিয়ে আত্মহত্যার কথা বলতেন সুদীপ। তিনিই তাঁকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিরস্ত করতেন। বৃহস্পতিবার বাড়িতে অশান্তির কথা জানিয়েই সুদীপ ওই হোটেলে এসে ওঠেন। ঘটনার কতক্ষণ আগে শেষ তাঁদের কথা হয়, কী কথা হয়েছিল তা জানতে চাওয়া হলে মহিলা ফোনে বলেন, "যা বলার, হোটেল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকেই বলব।" তবে তাঁদের বাড়িতে কোনও অশান্তি ছিল না দাবি করে এ দিন সুদীপের বাবা বলেন, “শুক্রবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ ছেলের সঙ্গে ফোনে আমার কথা হয়। কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। শনিবার সকালে হিমঘর থেকে দু’বস্তা আলু নিয়ে আসবে বলেছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘দলেরই কিছু লোক পরিকল্পিত ভাবে ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে।” বিজেপির ওই মণ্ডলের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী রূপালী চৌধুরীর দাবি, ‘‘সুদীপের সভাপতি হওয়া ভাল চোখে নেননি আগের সভাপতি। তাঁকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা যায় না।’’ আগের মণ্ডল সভাপতি মনোজিৎ গুঁই বলেন, “সুদীপের সঙ্গে আমার কোনও শত্রুতা ছিল না। জানি না, কেন এই সব কথা তোলা হচ্ছে।’’ বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার বলেন, ‘‘কেউ যদি সত্যিই যুক্ত থাকে, তার শাস্তি চাইব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy