জালনোট পাচার করতে গিয়ে ধৃত এক পাচারকারী। — নিজস্ব চিত্র
একের পর এক সাজা ঘোষণার পরেও রাশ টানা যাচ্ছে না জাল নোটের কারবারে।
পুলিশের দাবি, কমা তো দূরের কথা, উল্টে বরং জাল নোটের কারবার বেড়েই চলেছে মুর্শিদাবাদের সীমান্ত এলাকায়। জঙ্গিপুর মহকুমার সীমান্ত লাগোয়া দুই থানা এলাকায় গত একমাসে অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে সমশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা থানার পুলিশ। তাদের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি জাল টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতদের বেশিরভাগ ওই দুই থানা লাগোয়া বৈষ্ণবনগরের চর এলাকার বাসিন্দা।
শনিবার জাল নোটের কারবারে ধৃত বাবর আলি ও আব্দুল খালেক নামে দু’জনকে ৫ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে জঙ্গিপুর দ্বিতীয় ফাস্ট ট্রাক আদালত। এদের মধ্যে বাবর আলি অরঙ্গাবাদ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আব্দুল খালেক হাসানপুরের বাসিন্দা। গত সপ্তাহেও জঙ্গিপুরের আর এক আদালত জাল নোটের কারবারে কালাম শেখ নামে একজনকে ৭ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি জাল নোট কাণ্ডে মালদহের চর সুজাপুরের বাসিন্দা গোপেশ মণ্ডল নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় জঙ্গিপুর আদালত। আইনজীবীদের দাবি, রাজ্যে সেটাই প্রথম যাবজ্জীবন সাজা।
জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী সৈয়দ সাদেক রিটু বলেন, “জঙ্গিপুরের বিভিন্ন আদালতে অন্তত দেড়শোটি জাল টাকার মামলা চলছে। বেশির ভাগ মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ৮০ শতাংশ অভিযুক্তই মালদহের বৈষ্ণবনগর চর এলাকার বাসিন্দা। ধুলিয়ান দিয়ে তারা মুর্শিদাবাদে ঢুকেছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।”
সৈয়দ জানান, ধুলিয়ান ও ফরাক্কাকে এখন জাল টাকার করিডোর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই পথে জাল টাকার কারবারের বাড়বাড়ন্ত এত বেশি যে শুধু রাজ্য পুলিশই নয়, ডিআরআই, এনআইএ, সিবিআই সকলকেই জাল টাকার মামলার তদন্তে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একাধিক সংস্থার তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে। ফলে জাল টাকার মামলায় সাজা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
তবে সম্প্রতি জাল নোটের কারবারে রমরমা যে ফের বেড়ছে পুলিশি ধরপাকড়েই তার আভাস মিলছে। জেলা পুলিশের এক কর্তাও কবুল করছেন, ‘‘মাঝে কিছুদিন ওই কারবার অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু ফের তা মাথাচাড়া দিয়েছে। তবে হাল ছাড়ছি না। কড়া নজরদারির ফলেই জাল নোটের কারবারিরা পুলিশের জালে ধরা পড়ছে।’’
কেন মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ও ফরাক্কাকে জাল টাকার কারবারে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে?
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, কারণটা আসলে ভৌগোলিক। বৈষ্ণবনগরের ওই চর এলাকা থেকে গঙ্গা পেরোলেই ফরাক্কা কিংবা ধুলিয়ান। আর এই দুই শহরে পৌঁছতে পারলেই রেল ও সড়ক পথে সহজেই রাজ্য ও দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছনো যায়। কিন্তু মালদহ যেতে গেলে দূরত্বের পাশাপাশি ঝক্কিও অনেক। আর সেই কারণেই এই দুই শহরকে বেছে নেওয়া হচ্ছে।’’
সম্প্রতি জাল নোট কাণ্ডের তদন্তে এসে সমশেরগঞ্জ থানার ধুলিয়ানে রীতিমতো ঘাঁটি গাড়ে এনআইএ কলকাতা অফিসের ডেপুটি পুলিশ সুপার কাঞ্চন মিত্রের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের দল। ধুলিয়ান থেকে আনিকুল শেখ ও সেলিম শেখ নামে জাল নোট পাচারের দুই চাঁইকে গ্রেফতার করে তারা। মালদহের বৈষ্ণবনগরের দৌলতপুরের ওই দু’জনকে বহু দিন ধরেই খুঁজছিল এনআইএ।
এনআইএ সূত্রে খবর, জাল নোটের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কাকে। ধৃতদের ৮০ শতাংশই মালদহের বৈষ্ণবনগর ও কালিয়াচক এলাকার। আর মুর্শিদাবাদে এই কারবারের শীর্ষে ধুলিয়ান তথা সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা। সামশেরগঞ্জ পুলিশ তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে ধুলিয়ান ফেরিঘাটেও।
পুলিশ জানিয়েছে, বৈষ্ণবনগরের এই চর এলাকা থেকে ধুলিয়ানে ফেরিঘাট পেরিয়ে মুর্শিদাবাদে ঢুকছে জাল নোট। সেখান থেকে রেলপথে তা ফরাক্কা হয়ে বিহার, মুম্বই, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও দিল্লিতে যাচ্ছে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাসে তা যাচ্ছে বহরমপুর হয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy