ছাত্র আন্দোলনে গেটে তালা। হরিণঘাটায়। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
তৃণমূলের ছাত্র আন্দোলনের জেরে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট-সহ অন্য সকল গেটেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে টিএমসিপি-র লোকজন। বিসিকেভি-র উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তারা শ্লোগান দিতে থাকে। উপাচার্যের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে শুক্রবার বিকেলের দিকে অবশ্য আন্দোলনকারীরা অনেকটাই শান্ত হয়। তখন অধ্যক্ষ-সহ অন্য শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকতে পারেন। ওই ঘটনার জেরে এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বর্ষের পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়।
বছরখানেক আগে গৌতম সাহাকে উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম থেকেই তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে নানা বিষয়ে তাঁর মতানৈক্য হয়। অভিযোগ, টিএমসিপি নেতৃত্বের চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে উপাচার্য নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে মতানৈক্য ক্রমশ বিবাদে পরিণত হয়। জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রেরা কোন হস্টেলে থাকবে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টিএমসিপি নেতৃত্বের বিবাদ বাধে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্নাতক স্তরের ছাত্রদের জন্য রমণ আবাস ও জগদীশ আবাস নামে দু’টি আবাস আছে। এই মুহূর্তে রমণ আবাসে প্রথম বর্ষের ছাত্রেরা আছে। চতুর্থ বর্ষের ছাত্রেরা সদ্য পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছে। আর জগদীশ আবাসনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্রেরা আছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিস জারি করে জানায়, যে যে ছাত্রেরা এ বার নতুন ভর্তি হয়েছে, তারা রমণ আবাসে থাকবে। যা মেনে নেয়নি জগদীশ আবাসের ছাত্রেরা। আর তাতেই দুই আবাসের পড়ুয়াদের মধ্যে বিবাদ চরম আকার নেয়। অভিযোগ, শুক্রবার রাতে জগদীশ আবাসের একদল পড়ুয়া আচমকা রমণ আবাসে চড়াও হয়। তারা রমণ আবাসের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। রমণ আবাসের ছেলেদের মারধর করে বলেও অভিযোগ।
আন্দোলনরত টিএমসিপি নেতৃত্বের দাবি, উপাচার্য ছাত্রদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছেন বলেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আন্দোলনকারী টিএমসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের যুগ্ম আহ্বায়ক শুভদীপ মহাপাত্রের দাবি, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে নবাগত প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা থাকবে চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়াদের সঙ্গে। এতে র্যাগিং আটকানো যাবে। এই বছর সেই একই কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছেনে, নবাগত প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা থাকবে পুরনো প্রথম বর্ষ অর্থাৎ পরবর্তী দ্বিতীয় বর্ষের সঙ্গে।” এ দিন তাঁর দাবি, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেই নিজের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। আমরা এর বিরোধিতা করছি। আমরা চাই, গত বছরের সিদ্ধান্তই মেনে চলা হোক।”
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে উপাচার্য গৌতম সাহা এ দিন বলেন, “ইউজিসি-র অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির পরামর্শ হল— প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের উপরে যাতে কোনও র্যাগিং না হয়, তার জন্য যেখানে রাখলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মনিটরিং-এ করতে সুবিধা হবে, সেখানে পড়ুয়া রাখবে। সমস্ত দিক বিচার করে আমরা নোটিস জারি করি। কিন্তু অশান্তির কারণে তা বাতিল করতে হয়েছে। এখন নতুন করে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হল— ছাত্রদের দাবি, তাদের দাবি মতোই নতুন ছাত্রদের রাখতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “র্যাগিং নিয়ে আমরা অত্যন্ত সচেতন। কারণ র্যাগিং হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই কৈফিয়ত দিতে হবে। যে কারণে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy