রান্নার আয়োজন। নিজস্ব চিত্র
ভাবনার শুরুটা হয়েছিল লকডাউন শুরু হওয়ার দিন কয়েক আগে। সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের আতঙ্কের আঁচ এসে পড়েছিল ভারতেও।
কৃষ্ণনগর কলেজিয়েটের প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে মেডিক্যাল পড়ুয়া আকাশদীপ ঘোষ খবরের কাগজে বাজারে স্যানিটাইজ়ারের অপ্রতুলতার একটি খবর পড়েন। যা থেকে তাঁর মনে হয়, যদি স্কুলের সবাইকে নিয়ে স্যানিটাইজ়ার বানিয়ে বিলি করা যায়, তা হলে অবস্থার কিছুটা সুরাহা হতে পারে। এর পরেই এগিয়ে আসেন আরও কিছু প্রাক্তন ছাত্র। পাশে দাঁড়ান কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস। স্কুলের ল্যাবে রসায়ন শিক্ষক অনির্বাণ পাল ও সুমন দাসের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক ভাবে ৮৭৫ শিশি স্যানিটাইজ়ার তৈরি করে বিলি করা হয় প্রশাসন, পুরসভার সাফাইকর্মী ও পথচলতি মানুষের মধ্যে।
এর পরেই ২৩ মার্চ লকডাউন শুরু হয়ে যায়। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রেরা অনুভব করেন, লকডাউনে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন অনেকে। সেই সব দুঃস্থ মানুষের কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই ৪ এপ্রিল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শুরু হয় কমিউনিটি কিচেন।
এগিয়ে এলেন স্কুলের অনেক প্রাক্তন ছাত্রই। তার মধ্যে ২০১৭ সালে এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করা মূক ও বধির ছাত্র সপ্তর্ষি দাসও আছেন। সেই থেকে তিনি রোজ স্কুলে এসে রান্নার কাজে হাত লাগাচ্ছেন। সপ্তর্ষির হাতের ইশারায় বলা কথা এখন অনায়াসে বোঝেন বাকি ছাত্রেরা।
২০১৯ সালে এই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বর্তমানে প্রেসিডেন্সির ভূগোল বিভাগের ছাত্র রোহান আলি মল্লিকও এই দলে ভিড়েছেন। লকডাউনের আগে ছুটিতে বাড়ি ফিরে লেগে পড়েছেন কমিউনিটি কিচেনে বাসন মাজার কাজে। আবার, বাড়িতে যে ছাত্র কোনও দিন রান্নাঘরের ধারেকাছেও যাননি, সেই ইংরেজি স্নাতক বিভাগের পড়ুয়া হেমাভ সরকার রোজ রান্না করছেন কমিউনিটি কিচেন-এ। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ডাক্তারি পড়ুয়া সৌমদ্বীপ নন্দী, প্রাক্তন স্কুলের কমিউনিটি কিচেনের জন্য যেখান থেকে সাহায্যের আশ্বাস আসছে, সেখানে সেখানে ছুটছেন সাহায্য আনতে। বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রেরা নিয়মিত সাহায্য করছেন এই কমিউনিটি কিচেন চালাতে। এ ছাড়াও আরও অনেক মানুষ, যাঁরা কেউ এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত নন কোনও ভাবে, তাঁরাও স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন সাহায্য করতে।
কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের নৈশ্য প্রহরী ঝন্টু দত্ত রাতে নাইট ডিউটি করছেন। আর দিনের বেলা রান্না করছেন কমিউনিটি কিচেনের জন্য, যেখান থেকে খেয়ে লকডাউনে বেঁচে আছেন এলাকার বহু দুঃস্থ-অসহায় মানুষ। ওই স্কুলে প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৩০০ মানুষের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করা হচ্ছে। সকালে ছাত্রেরা কোনও একটি অঞ্চলে সমীক্ষা করে এসে দুপুরে টোটো করে সেখানে প্রয়োজনীয় মানুষদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। এ ছাড়াও শিশুদের দুধ, চাল, ডাল, আলু ও প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষের কাছে জিনিস পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা।
জানা গেল, আরও ১৭০০ শিশি স্যানিটাইজ়ার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে করোনা মোকাবিলায়, যাঁরা প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করছেন। সেগুলি এলাকার সকল স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন, সাংবাদিক, পুরসভার কর্মীদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।
স্কুলের প্রধানশিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছাত্রেরা মহান কাজে ব্রতী হয়েছে।’’ তাঁদের সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy