চিনাপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিমল বাইন। নিজস্ব ছবি।
ছাত্রীদের সঙ্গে ‘অশ্লীল আচরণ’ ও তাদের ‘বিয়ের প্রস্তাব’ দেওয়ার অভিযোগে গত সাত মাস ধরে স্কুলেই ঢুকতে পারেন না প্রাথমিক শিক্ষক। তা সত্ত্বেও হাজিরার খাতায় প্রত্যেক দিন তাঁর সই রয়েছে। মাসে মাসে বেতনও ঢুকে যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে! গত ৭ মাস ধরে স্কুলে না এসে বেতন নেওয়ার এই অভিযোগ উঠল নদিয়ার রানাঘাটের ১ ব্লকের গাংনাপুর খানার চিনাপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিমল বাইনের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রানাঘাটের স্কুল পরিদর্শকের দফতরে গিয়ে দেখা গেল, চেয়ারে বসে ঘুমে ঢুলছেন পরিমল। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো স্কুলে যেতে চাই। কিন্তু আমায় বের করে দিয়েছে। এ ভাবে বসে বসে বেতন নিতে আমারও ভাল লাগে না।’’ স্কুল সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে চিনাপুকুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন পরিমল। তার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক বার স্কুলের মহিলাকর্মীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করার অভিযোগ উঠেছে। তার ভিত্তিতে ২০১৯ সালে পরিমলকে অন্য একটি স্কুলে বদলি করা হয়। কিন্তু বছর দু’য়েক পরেই আবার চিনাপুকুরিয়ায় ফিরে আসেন তিনি। এ বার পরিমলের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ‘বিয়ের প্রস্তাব’ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত বাগচী বলেন, ‘‘স্কুলে ফিরে এসে ফের ছাত্রীদের সঙ্গে নোংরা আচরণ করা শুরু করেন উনি। চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছেন!’’
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অশালীন কার্যকলাপের জন্যই স্কুল থেকে ‘তাড়িয়ে’ দেওয়া হয়েছে বছর পঞ্চান্নর পরিমলকে। স্কুল পরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়। তার ভিত্তিতে গত বছর ৯ জুলাই স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশে স্কুলের শিক্ষক পদ থেকে পরিমলের ‘নাম তুলে নেওয়া হয়েছে’। তার পরেও তিনি কী ভাবে মাসের পর মাস বেতন পেয়ে যাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্কুলের বাকি শিক্ষকেরা। কেন তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। স্কুলের এক সূত্রের দাবি, স্কুলে না এসে গত ৭ মাস ধরে নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুল পরিদর্শকের অফিসে গিয়ে বসে থাকেন পরিমল! ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারও তাঁকে সেখানেই দেখা গিয়েছে। স্কুলে কেন যান না, তা জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘‘ক্লাস ফোরের এক ছাত্রীকে আমার ভাল লাগত। ওকে বিয়ের করার জন্য ওর মাকে বলি। তার পরেই আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’’
বিনা শ্রমে পরিমলের বেতন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন সহকারী স্কুল পরিদর্শক সুকন্যা রায়চৌধুরীও। তিনি জানান, স্কুল পরিদর্শক অসুস্থ থাকায় গত বেশ কয়েক দিন ধরে সেই দায়িত্ব তিনিই সামলাচ্ছেন। যদিও পরিমলের ব্যাপারে বিশেষ কিছু বলতে চাননি তিনি। এ বিষয়ে রানাঘাটের এসডিও হরিশ রশিদ বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনও লিখিত অভিযোগ আমি পাইনি। পেলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’
পরিমলের ‘কীর্তি’র পিছনে তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে বলেই মত পরিবারের। ছেলের কথায়, ‘‘বাবা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তার জন্য আমরা সকলেই লজ্জিত। তবে বাবার কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে। সেই কারণেই হয়তো এ সব করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy