—ফাইল চিত্র।
একটু নজর করলেই দেখা যাবে এখন আর কারও সময় নেই। খুবই তাড়া। ছুট… ছুট..। কোথায় ছুটছে, কেন ছুটছে সে কেউ জানে না। যে ছুটছে সেও জানে না এর উত্তর। কিন্তু সবাই ছুটছে আগে যাওয়ার জন্যে। আগে মানে ফার্স্ট হওয়ার জন্যে এই ছুটে চলা। তা সে লেখাপড়ায় হোক, খেলাধুলোয় হোক, বা সামান্য পথে চলাই হোক। সব সময় মনে হবে ব্যস্ততার মধ্যে চলেছে এই প্রজন্ম। চারপাশে আর কিচ্ছুটি নেই। শুধু আমি। আমায় পৌঁছতে হবে সবার আগে। আশপাশে কে ধাক্কা খেয়ে পড়ল, কার লাগল, বা কেউ আমার জন্যে আহত হল বা বঞ্চিত হল, এ সব দেখার সময় নেই কারও। শুধু জানা আছে আমার চাই ব্যস।
এই যে মনোভাব, এ তো কোন দৈব আদেশ বা অভিশাপের ফল নয়। এর শেকড় সন্ধান করলে আমরা আমাদের মুখই দেখতে পাব। আমরাই তো তাদের স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রীক, সংকীর্ণ বানিয়েছি। তাদের নামিয়েছ প্রতিযোগিতার ঘোড়দৌড়ের মাঠে। প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রকৃত বন্ধু, আত্মীয়, পরিজন বা প্রতিবেশিকে এড়িয়ে চলতে শিখিয়েছি। আমরা অভিভাবকরা প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিয়েছি না, কোনও বন্ধুকে সাহায্য করতে যাবে না। তা হলেই ও বেশি নম্বর পেয়ে যাবে। আর তুমি পড়বে পিছিয়ে। তোমার প্রশ্নের উত্তর আমি লিখে দিলাম, এটা কাউকে দেখাবে না। এর মধ্যে এমন সব পয়েন্ট দিয়েছি যা আর কেউ লিখবে না জেনো। তোমাকে টপার হতেই হবে.. এই তোমার টার্গেট।
সেই থেকেই টার্গেটের পেছনে ছোটার শুরু। আর পাশাপাশি অন্যকে হেয় জ্ঞান করা, আর সবাইকে অগ্রাহ্য করা, ছোট করার মনোভাবের বীজ বপন। ঠিক তার ফল আমরা পাচ্ছি হাতে হাতে। সবাই তো ফার্স্ট হবে না। তা কোনও দিন হয়নি, হতে পারে না। সুতরাং, এক সময়ে আসছে হতাশা। আর সেই হতাশা থেকেই জীবনের চরম বিপর্যয়। সেই সঙ্গে আছে দিশাহীন রাজনৈতিক প্রলোভন। সে জন্য আজকাল মনোরোগ বিশেষজ্ঞর প্রয়োজন হয়েছে খুব বেশি। আমাদের সময় এ ধরনের ভাবনা প্রায় ছিল না। কারণ এ সবের প্রয়োজন হয়নি। তার কারণ চতুষ্পার্শ ছিল বেশ খোলামেলা। যেমন প্রকৃতিতে, তেমনই সমাজজীবনে। পাড়া প্রতিবেশী বয়স্ক মানুষেরা ছিলেন অভিভাবক। তাঁদের শাসন আর বাড়ির শাসনের মধ্যে কোনও ফারাক ছিল না। বরং তাঁরা যদি অভিভাবকের কাছে কোনও অভিযোগ জানাতেন তবে তার ফল হত অন্য রকম। আর এখন ঠিক তার বিপরীত। এখন সবাই আইন জানে, অধিকারের সীমানা জানে, আর জানে জীবনের মূলনীতি চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। তাই যে বোকা মানুষটা বিচিত্রানুষ্ঠানে মদ্যপদের আশালীন আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন, তিনি খুন হন এবং খুনি অধরা থেকে যায়। সম্পত্তির লোভে বৃদ্ধ মা-বাবাকে খুন করে সন্তান, বন্ধু বন্ধুকে হত্যা করে অবলীলায়, সাইবার ক্রাইম বেড়ে চলে, প্রতিশ্রুতি এবং প্রতারণা পাল্লা দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। আবার, শিক্ষিকতাকে পেশা হিসাবে নিয়েও কোনও উচ্চাশায় তার যাপন সমগ্র পরিবারের উপর চূড়ান্ত যবনিকা টেনে আনে। এ সবই ভেবে দেখার সময় এসেছে। আদর্শের পিছনে নয়, অর্থের পিছনে ছোটাই মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ভোগবাদ আমাদের আপাদমস্তক গ্রাস করেছে। আর আমরা অভিভাবকরা তাতেই মদত দিচ্ছি।
এই প্রজন্মের প্রায় সবাই খুব রাগী, উদ্ধত, বেপরোয়া, সহবত শিক্ষাহীন বলে মনে হয়। আসলে এটা ওদের ঠিক লক্ষ্যও না, হতাশার ফল। চাহিদাটা এমন জায়গায় স্থির করে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব। অথচ যদি তার ইচ্ছা, রুচি, প্রবণতাকে মূল্য দেওয়া যেত, যদি তার স্বাধীন সত্ত্বার বিকাশ ঘটতে দেওয়া হত, তবে বোধ হয় এই অসুস্থ জীবনযাপন করতে হত না। নাগরিকত্বের শিক্ষা আলাদা করে দেওয়ার দরকার নেই, শুধুমাত্র সামাজিক শিক্ষা যদি সঠিক ভাবে দেওয়া যায় তবেই সুনাগরিক পাওয়া সম্ভব এই বোধ আমাদের জাগাতে হবে।
অভিভাবকরা সব সময় চাইছেন আমার সন্তান যেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হয়। তবেই তারা অর্থের প্রাচুর্য পাবে, ভাল থাকবে। এই ভাল থাকার চিন্তা তা শুধু অর্থভান্ডার ভিত্তিক। সোজা কথায় তুমি বড়লোক হও। এই ভাবনার আমূল পরিবর্তন করে যদি ভাবতে পারি, না বড়লোক নয়, তুমি বড় মানুষ হও, তবেই বোধ হয় আমরা সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy