Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Krishnanagar-Karimpur rail project

‘কৃষ্ণনগর-করিমপুর’ প্রকল্পের জন্য জমি চাই, রাজ্যের দুই ব্লক আধিকারিককে চিঠি দিল পূর্ব রেল

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গত ১২ অক্টোবর পূর্ব রেলের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারের তরফে দুই বিডিওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিতে দুই ব্লকের মানচিত্র চেয়ে পাঠিয়েছে রেল।

ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৫৫
Share: Save:

সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানার সূত্রে টাটা মোটরসকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে রাজ্যকে আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল (সালিশি আদালত) যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে বাম আমলের সেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন। টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য সেই জমি অধিগ্রহণকে পরে ‘অবৈধ’ বলে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তা নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের মধ্যেই কৃষ্ণনগর-করিমপুরের রেল প্রকল্পের জন্য নদিয়ায় জমির খোঁজ করছে পূর্ব রেল। তার জন্য করিমপুরের ১ ও ২ ব্লকের মৌজার নকশা চেয়ে পাঠানো হয়েছে দুই ব্লকের বিডিওর কাছে।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গত ১২ অক্টোবর পূর্ব রেলের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারের তরফে দুই বিডিওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠিতে দুই ব্লকের মানচিত্র চেয়ে পাঠিয়েছে রেল। জানানো হয়েছে, প্রস্তাবিত রেল প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করতে ওই নথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে অবশ্য করিমপুর ১ ও ২ ব্লকের বিডিও প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। তবে বি়ডিও অফিস সূত্রে খবর, বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিনিই নেবেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় তেহট্টের মহকুমাশাসক অনন্যা সিংহের সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘‘মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে কাজে যোগ দিয়েছি। বিস্তারিত নথি আমার কাছে এখন নেই। সব কিছু খতিয়ে দেখে পরে জানাব।’’

গত জানুয়ারি মাসে রেলওয়ে বোর্ডের জয়েন্ট ডিরেক্টর পূর্ব রেলের ডিভিশন ম্যানেজারকে চিঠি লিখে ‘কৃষ্ণনগর-করিমপুর’ রেলপথের সমীক্ষা শুরুর কথা জানিয়েছিলেন। রেল মন্ত্রক সমীক্ষার কাজের জন্য দু’কোটি টাকা বরাদ্দও করে। সেই সময় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র দাবি করেন, ২০১৬ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি এই রেল যোগাযোগ স্থাপনে সচেষ্ট হয়েছিলেন। করিমপুর এই লাইনের প্রান্তিক স্টেশন হবে, ফলে তেমন বাণিজ্যিক পরিবহণ সম্ভব না হওয়ায় রেলমন্ত্রক এতে এত দিন আগ্রহ দেখায়নি। গত বছর ১৮ অক্টোবর রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে দেখা করে তিনি দীর্ঘ বৈঠক করেন এবং চিঠিতে ফের এই প্রস্তাব দেন। ফেসবুকেও মহুয়া লিখেছিলেন, “রেলমন্ত্রক আমার এই ডাকে সাড়া দিয়ে দু’কোটি টাকা ব্যয়ে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেললাইনের সার্ভের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তার পরেই অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফের শুরু হয়েছে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেলপথ সমীক্ষার কাজ। রেল সূত্রে খবর, পাঁচটি সমীক্ষক দল এই সমীক্ষা চালিয়েছে।

নদিয়ার প্রান্তিক জনপদ করিমপুরে রেল চালানোর দাবি বহু দিনের। তা না হওয়ায় কার্যত কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়কের উপর পরিবহণ সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ১৯০৫ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ক্যাপ্টেন সিএল ম্যাগনিয়াক এবং মি রেডিস প্রথম কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর ভায়া করিমপুর রেলপথের সমীক্ষা করেছিলেন। তার পর থেকে বেশ কয়েক বার নানা উদ্যোগ হলেও রেলপথ আজও করিমপুর ছোঁয়নি। করিমপুরবাসীর আক্ষেপ, কংগ্রেস আমলে রেলমন্ত্রী গনি খান চৌধুরী পরে লালুপ্রসাদ যাদব, রামবিলাস পাসোয়ান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সকলেই রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে এই রেলপথ তৈরির কথা তুলেছেন। লোকসভার অধিবেশনে কাগজপত্র আদান-প্রদান হয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে মঞ্চের বক্তৃতায় ফিরে এসেছে এই প্রসঙ্গ। কিন্তু ধামাচাপা পড়েছে সমস্ত ফাইল। প্রত্যেক বছর রেলবাজেটের আগে করিমপুর চাতকের মতো চেয়ে থেকেছে, কিন্তু রেললাইন মেলেনি।

তবে গত দু’মাসে রেল প্রকল্পের কাজে তৎপরতা দেখে খুশির হাওয়া বয়ে গিয়েছে কৃষ্ণনগর ও করিমপুরে। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা নবীন মজুমদার বলেন, ‘‘এই রেলপথ চালু হলে জেলার আর্থিক উন্নয়নও হবে।’’ করিমপুরের ভূমি দফতরের কর্মী নয়নিকা দাস বলেন, ‘‘নিত্যদিন সড়কপথে কৃষ্ণনগর অফিসে যাতায়াত করতে হয়। আর্থিক ও শারীরিক সমস্যা বেড়েই চলেছে। রেলপথ হলে অন্তত কিছুটা কষ্ট কমবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar-Karimpur rail project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy