ফাইল চিত্র
বিপর্যয়টা শুরু হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বছর থেকেই। এর পরে প্রতি বছরই হু-হু করে কমেছে সদস্যসংখ্যা। কিন্তু মোদী দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে হিসেবটা ঘুরে গিয়েছে। নাগরিক পঞ্জি বিতর্কের শুরু থেকেই সদস্যসংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফ-এর।
সিপিএমে এই রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার সময়ে তাদের যুব সংগঠনে সদস্যপদ নিতে উৎসাহীর অভাব ছিল না। যে বছর বামেরা ক্ষমতা থেকে সরে গেল, তার ঠিক আগেও তাদের সদস্যসংখ্যা ছিল যে কোন রাজনৈতিক যুব সংগঠনের কাছে ঈর্ষনীয়। ২০১০ সালে শুধু নদিয়া জেলাতেই তাদের সদস্য ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ২৬ হাজার। পরের বছর, ২০১১-য় ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার সময়ে তা হাজার তিনেক কমেছিল। কিন্তু তখনই ধস নামেনি। ২০১৪ সালে মোদী সরকার যখন এল, তখনও ডিওয়াইএফ-এর সদস্যসংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ২৯ হাজার।
কিন্তু এর পর থেকেই সংখ্যাটা মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে। ২০১৫ সালে তা নামে ৩ লক্ষ ১০ হাজারে। তার দু’বছরের মধ্যে সদস্যসংখ্যা নেমে যায় ২ লক্ষ ২০ হাজারে। ২০১৮ সালে কমে হয় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার। কিন্তু ২০১৯ সালে সেই রক্তক্ষরণ থেমে গিয়েছে। উল্টে সদস্যসংখ্যা অল্প হলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি বছর ডিওয়াইএফ ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহ করে। গত বছর নদিয়ায় সদস্যসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪০৫।
অনেকেই মনে করছেন, বিলীন হতে বসা বামের ধমনীতে এই নতুন রক্তসঞ্চারের যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তার সৌজন্যে সিএএ-এনআরসি নিয়ে দেশ জোড়া বিতর্ক। তবে আরও কিছু কারণ রয়েছে বলে সিপিএম নেতাদের ধারণা। দলের জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাস বর্তমানে সিপিএমের তরফে যুব সংগঠনের দায়িত্বে আছেন। এর আগে প্রায় দশ বছর তিনি কখনও ডিওয়াইএফ-এর জেলা সম্পাদক, কখনও সভাপতি ছিলেন। তাঁর মতে, “মোদীর ভাঁওতায় বিশ্বাস করে যুব সম্প্রদায় আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। কিন্তু বেকারত্ব এবং আর্থিক দুরবস্থার কারণে তাদের মোহভঙ্গ হয়েছে। তারা বুঝতে পারছে, রাস্তায় নেমে আন্দোলন না করলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে না। তাই তারা আবার ফিরে আসছে।”
ডিওয়াইএফ নেতৃত্বের বিশ্লেষণ বলছে, অসমে নাগরিক পঞ্জি কার্যকর হওয়ার সময় থেকেই তাঁদের সদস্য বাড়তে শুরু করেছে। নাগরিক পঞ্জি ও নাগরিকত্ব আইন যে যুব সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ মানতে নারাজ, সেই ইঙ্গিত কার্যত স্পষ্ট। তাঁদের আশা, এই কারণেই যুব সম্প্রদায় ফের বামপন্থার দিকে ঝুঁকছে। তৃণমূল ও বিজেপির যুব সংগঠন অবশ্য এই দাবি মানতে নারাজ। যুব তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান শেখ বলছেন, “একটা সংখ্যা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিলেই হল? তা কতটা বাস্তবসঙ্গত তা-ও তো দেখতে হবে। ওই সংগঠনের অস্তিত্বই তো চোখে পড়ে না! কেন কেউ ওদের সদস্যপদ নিতে যাবে? আমাদের নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মিছিল দেখলেই বুঝতে পারবেন যুব সম্প্রদায় কাদের সঙ্গে আছে।”
বিজেপির যুব মোর্চার নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রবীর সরকারের কটাক্ষ, “যে কেউ দু’টাকা দিলেই আমাদের সংগঠনে সদস্য হতে পারে না। তার জন্য নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশাত্ববোধের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে হয়। বর্তমান যুব সম্প্রদায় বামপন্থাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, কেন ওদের সদস্য হতে যাবে!”
ডিওয়াইএফ-এর জেলা সম্পাদক রুদ্রপ্রকাশ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করছেন, “শহরে-গ্রামে যুবক-যুবতীরা যে ভাবে আমাদের সদস্য হওয়ার জন্য এগিয়ে আসছেন, আমরা অভিভূত। নিশ্চিত ভাবেই তাঁরা বুঝতে পারছেন যে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সত্যি করে আমরাই পথে আছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy