ভেঙে গিয়েছে দোকান। রয়ে গিয়েছে স্মৃতি। বৃহস্পতিবার দিগনগরে। নিজস্ব চিত্র
দিগনগরে বাধা এসেছিল আগেই। তার উপর বুধবার ফুলিয়ায় স্থানীয় জমিদাতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য উচ্ছেদের কাজে বাধা দেয় অনগ্রসর জনজাগরণী মঞ্চ। ফলে, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে প্রচুর পুলিশ মোতায়ন করে বৃহস্পতিবার সাতসকালেই দিগনগরে জমি ফাঁকা করার কাজ সেরে ফেলল প্রশাসন। মঞ্চের নেতারা যাতে কোনও বাধা দিতে না পারে তার জন্য তাঁদের গাড়ি আটকে দেওয়া হয় আগেই।
প্রথম থেকেই দিগনগর এলাকার জমিদাতারা অভিযোগ করছিলেন, তাঁদের কম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। ২০১৩ সালের নতুন আইন অনুযায়ী বর্ধিত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও তোলেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দিগনগরে উচ্ছেদের খবর পেয়ে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা থেকে গাড়িতে নদিয়ার দিগনগরের দিকে রওনা দিয়েছিলেন অনগ্রসর জনজাগরণী মঞ্চের নেতারা। গাড়িতে সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ আহমেদ-সহ ন’জন ছিলেন। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হলেও রাতে সৈয়দ আহমেদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঞ্চের দাবি, রানাঘাটে গাড়ি আটকে পুলিশ সকলকে থানায় নিয়ে যায়। পরে এক নেতাকে ধরে রেথে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতারের কথা জানায়নি। জনজাগরণী মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ বিশ্বাস বলেন, “আমরা তো শান্তিপূর্ণ ভাবেই আন্দোলন করছি যাতে জমিদাতারা ন্যায্য পাওনা আদায় করতে পারেন। তার পরেও প্রশাসন কেন এমনটা করল বুঝতে পারছি না।”
মঞ্চের দাবি, এ দিন কৃষ্ণনগরে সংগঠনের সাপ্তাহিক বৈঠক করতে আসছিলেন নেতারা। তখনই তাঁদের আটক করা হয়। যদিও পুলিশের একটা অংশের দাবি, বৈঠক করতে নয়, ওঁরা আসছিলেন ফুলিয়ার মতো দিগনগরেও অশান্তি পাকানোর জন্য। নেতাদের আটকে দেওয়ায় প্রথমেই হতোদ্যম হয়ে পড়েন দিগনগরের জমিদাতারা। জেলা পুলিশের একাধিক কর্তার উপস্থিতিতে বিরাট বাহিনী দেখে তাঁরা আর বিরোধিতা করার সাহস দেখাননি। সকাল ৮টা থেকে জাতীয় সড়কের দু’পাশে একের পর এক বাড়ি ও দোকান বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিতে শুরু করে প্রশাসন। সেই ভগ্নস্তুপের দিকে তাকিয়ে বছর পঞ্চান্নর এক জমিদাতা বলেন, “আমরা তো জমি দেব না বলিনি। সকলের স্বার্থে এক কথায় জমি দিতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল। নামে মাত্র জমির দাম দিল। কোনও কথাই শুনল না!”
এর আগে একাধিক বার জেলা প্রশাসনের কর্তারা জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পরেও বুধবার ফুলিয়ার জ্যোতিপল্লিতে উচ্ছেদে বাধা দেওয়া হয়। এ দিন জেলাশাসক বিভু গোয়েল, অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস, রানাঘাটের মহকুমাশাসক হরসিমরন সিংহ এবং শান্তিপুরের বিডিও সুমন দেবনাথ বৈঠক করেন জমিদাতাদের সঙ্গে। সেখানে কর্তারা জমিদাতাদের কাছে আইনের বিষয়টি পরিষ্কার করে দেন। তাঁরা জানান, যেহেতু ২০০৯-১০ সালে অধিগ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, তাই কোনও ভাবেই ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব নয়। শান্তিপুর ব্লকের উদয়পুর, শুকপুকুরিয়া, বেলগড়িয়া ও বিহারিয়া মৌজার যে সব জমিদাতার নথিপত্র সংক্রান্ত সমস্যা আছে, তাঁদের আজ, শুক্রবার শান্তিপুর ব্লক অফিসে যেতে বলা হয়। সেখানে জমিদাতাদের সঙ্গে আবার কথা বলবেন কর্তারা।
বস্তুত, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা জমি অধিগ্রহণের কাজ সেরে ফেলতে যে প্রশাসন মরিয়া, তা কার্যত স্পষ্ট। এক দিকে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখলেও প্রচুর পুলিশ মোতায়ন করে, প্রয়োজনে মঞ্চের নেতাদের আটকে রেখে তারা জমি অধিগ্রহণের কাজ সেরে ফেলতে চাইছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) বলেন, “ক্ষতিপূরণ আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। আইনে যা বলা আছে, তার বাইরে আমরা যেতে পারি না। আমরা সেটা সকলের কাছে পরিষ্কার করে দিচ্ছি। জোর করে কারও জমি নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা বারবার আলোচনায় বসতে রাজি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy