Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
এলেম নিজের দেশে
Migrant Worker

লাইনে দাঁড়িয়ে এক বেলা করে খেয়ে দিন কেটেছে

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করে আমি কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমার এক বন্ধুর মামা জানাল কাজ আছে, কিন্ত যেতে হবে পঞ্জাবের লুধিয়ানায়।

এএফপি-র তোলা প্রতীকী ছবি।

এএফপি-র তোলা প্রতীকী ছবি।

মতিউর রহমান
তিলডাঙা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

আমাদের তিলডাঙা গ্রামটি ঝারখণ্ড রাজ্যের কিছুটা ও পশ্চিমবঙ্গের কিছুটা নিয়ে। এখানকার যাতায়াতের রাস্তা খুব খারাপ। এখানকার মানুষের জীবিকা প্রধানত চাষ। মাটিতে পাথর থাকায় ফসলের ফলন কম হয়। ধান ও রবি শস্যের চাষ হয় এখানে। তাই চাষিরা আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া। শিক্ষার হার খুব কম। শহর যেতে হলে ঝারখণ্ডের বারহারওয়া বাংলার ফরাক্কা। দুটোই সমান দূরত্বের। এর মধ্যে আমি বড় হয়েছি। গ্রামের হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশকরে ফরাক্কায় ভর্তি হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করলাম। এখানেই আমার পড়াশোনার ইতি হয়ে যায়। আমাদের এখানে পাহাড়ি জলে প্রায় বন্যা হয়। তার জন্য ফসল নষ্ট হয়ে যেত। মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়ে আবার চাষ করতে হোত। এভাবেই চলছিল আমাদের জীবন।

উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করে আমি কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় আমার এক বন্ধুর মামা জানাল কাজ আছে, কিন্ত যেতে হবে পঞ্জাবের লুধিয়ানায়। কাজ হবে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সহযোগী হিসাবে।

২০১৬ সালের মার্চ মাসে সেখান যাই। তারপর থেকে আমি সেখানেই থাকতাম। এক বছরে আমি সব কাজ শিখে যাই। আমি সম্পূর্ণ মিস্ত্রি রূপে কাজ করতে লাগলাম রোজগার বেড়ে গেল। বাড়িতে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে শুরু করায় ভাইয়েরা কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাড়িতে টিভি এসেছে। মা বাবা খুশিতে আছে।

আমিও বাবাকে সাহায্য করতে পারায় নিজেও তৃপ্তি পাচ্ছি। কিন্তু সব ভাল যে ভাল নয়, তা জানলাম লকডাউনে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন লকডাউন ঘোষণা করেন, তখন বুঝতে পারেনি এতটা ভয়ঙ্কর হবে। প্রথম লকডাউনে সে ধরনের অসুবিধা না হলেও দ্বিতীয় দফা লকডাউন শুরু হতেই বুঝলাম আর থাকা যাবে না। বাজারে আনাজ আছে কিন্তু দাম নাগালের বাইরে। চাল আলু মুদির দোকানে পাওয়া যায়। সেখানেও দাম প্রায় দ্বিগুণ। আমারা ভিন রাজ্যের লোক এখানে কিছু না থাকায় সরকারি সহযোগিতা কিছু নেই।

আমাদের জন্য পঞ্জাবিদের বিভিন্ন সংগঠন নোঙর খানা খুলেছে। সেখানে অনেকে গিয়ে খেয়ে আসে আমি দুদিন লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের খাবার খেয়েছি। বাড়ি ফিরে আসার কোন পথ নেই। তাই থাকতেই হল। কোন কাজ নেই নিজের কাছে যে টাকা ছিল তা শেষের দিকে। কী করা যায় এখানে কে আমাকে সহযোগিতা করবে ভেবে কুল কিনারা পাই না। তাই বাড়ি থেকে টাকা দিতে বললাম।

বাড়ির টাকা দিয়ে একবেলা খেয়ে একবেলা না খেয়ে থেকে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে বাড়ি ফিরেছি। এখন বাড়িতে, লকডাউন শেষ হলে ভাবব আগামীতে কি করব।

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Worker Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy