—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত। তা সত্ত্বেও আড়াই দশক আগেও এ রাজ্য থেকে পডশি বাংলাদেশ বা সেখানে থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে আসা ছিল অতি সহজ ব্যাপার। এ পারের সীমান্তের গ্রাম থেকে ও দেশের গ্রামে চা খেতেও অনেক সময় যাতায়াত করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছেই সীমান্তের নজরদারি। এখন অনেক আঁটোসাঁটো নজরদারি সেখানে। বিএসএফ সদা-সতর্ক।
বিএসএফের কড়াকড়িতে বর্তমানে প্রকাশ্যে যাতায়াত বন্ধ হয়েছে। তবে কখনও কখনও শীতে ঘন কুয়াশায় বর্ষার রাতে অন্ধকারে চলে ‘যাতায়াত’।
তবে স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এই ‘যাতায়াতের’ জন্য টাকাও খরচ করতে হয় তাঁদের। বিশেষত, কাঁটাতারহীন সীমান্তে কোথাও ৭,০০০ কোথাও আবার হাজার চারেক টাকা দালালের পকেটে গুঁজে দিলেই নিশ্চিন্তে পার করা যায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত। অনেকেরই তাই আশঙ্কা, এই আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে জঙ্গিদের এ দেশে ঢুকে পড়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে সুতি সীমান্তে ধরা পড়েছিল এক ব্যক্তি। পুলিশের দাবি, জেরায় সে স্বীকার করে ৭,০০০ টাকার বিনিময়ে এ দেশে ঢুকেছিল। মাসকয়েক আগেও কয়েক হাজার টাকা দালালকে দিয়ে এ দেশে অনুপ্রবেশ করা কিছু বাংলাদেশি ফের নিজেদের দেশে ফিরতে গিয়ে ধরা পড়ে। দিনকয়েক আগে এই জেলারই লালগোলা থেকেও দুই বাংলাদেশি ধরা পড়েছে। তারা অনেক আগে এ দেশে এসেছিল। সর্বশেষ গ্রেফতারির ঘটনা ঘটেছে জলঙ্গিতে। বৃহস্পতিবার চেন্নাই থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় তিন বাংলাদেশিকে আটক করে বিএসএফ। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন আগে তারা এদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল। তারপর কাজের খোঁজে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহরে যায়। বিএসএফ ও প্রশাসন সূত্রে খবর, আগেও একই ভাবে গ্রেফতার হয়েছে বাংলাদেশি নাগরিক। চোরাপথে এ দেশে এসে বিভিন্ন শহরে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে চলে গিয়েছিল তারা। তারপর ঘরে ফেরার চেষ্টা করার সময় তারা ধরা পড়ে।
তবে গত কয়েক মাস ধরে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন এবং ও দেশে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় সীমান্ত পেরনোর প্রবণতা আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। বিএসএফ সীমান্তে জ়িরো লাইনে চলে যাওয়ার ফলে চোরাপথে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরনোর সুযোগ কমেছে। তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি বলেই দাবি সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের একাংশের। চলতি শীতে কুয়াশার সুযোগে তেমন চেষ্টা হয় বলে দাবি তাঁদের। সীমান্তঘেঁষা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘নজরদারি বাড়ায় মানুষ পাচারের কারবারের রেট বেড়ে দ্বিগুণ করে দিয়েছে দালালেরা। এখনও সেই চেষ্টা হচ্ছে সীমান্তের কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়ে।’’ কিন্তু সম্প্রতি যে জেলা থেকে জঙ্গি সন্দেহে দু’জন ধরা পড়েছে এবং কেরল থেকে ধৃত এক জঙ্গির সঙ্গে যোগ মিলেছে, সেখানে একটা বড় অংশের এলাকা এখনও কাঁটা তারবিহীন কেন? বিএসএফের দাবি, ‘‘এই এলাকায় সীমান্ত ভাগ হয়েছে পদ্মা নদীর গাঁ ঘেঁষে, কোথাও নদীর মাঝখান দিয়ে। তা ছাড়া, পদ্মার ভাঙনে মাঝেমধ্যেই বদলে যায় ভূগোল। ফলে এই এলাকায় কাঁটাতার দেওয়া
কঠিন কাজ।’’
যদিও বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সম্প্রতি কাঁটাতার দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দু’দেশের সম্পর্ক ভাল থাকায় এত দিন এই বিষয়টি নিয়ে এতটা দুশ্চিন্তা ছিল না। তাঁদের ধারণা, কিন্তু বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েনে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। জ়িরো লাইনে ক্যাম্প তুলে নিয়ে যাওয়া তারই অঙ্গ বলে মনে করছেন তাঁরা।
জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশ এবং বিএসএফ মাঝেমধ্যেই অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে। মূলত আবহাওয়ার সুযোগ নিয়েই এই কাজটা হয় বলে শুনেছি। আর এই আবহাওয়াজনিত এবং ভৌগলিক সুবিধার সুযোগ নিয়ে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির একদল বাসিন্দা মানুষ পাচার নিয়ে দালালি করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy