Advertisement
E-Paper

ঘরে খাবার নেই, কানে আসছে গুলির শব্দ

একদিকে খিদের জ্বালায় পেট ছটফট করছে। এর মাঝেই বন্ধু মহম্মদ কালাম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে আমাদের দুর্দশার কথা লেখে।

দিল্লির সংঘর্ষে পুলিশি তৎপরতা (ইনসেটে আওলাদ শেখ)।

দিল্লির সংঘর্ষে পুলিশি তৎপরতা (ইনসেটে আওলাদ শেখ)।

আওলাদ শেখ

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০১:৫৩
Share
Save

বছর ছ’য়েক হল আমি দিল্লির জাফরাবাদ সংলগ্ন গন্ডাচক এলাকার একটি কারখানায় ইলেকট্রিক ফ্যানের কনডেন্সার তৈরির কাজ করি। ইদ বা অন্য পরবে বাড়ি আসি। বছরের বেশির ভাগ সময় দিল্লিতেই কাটে। কারখানা থেকে কিছুটা দূরে একটি বাড়িতে আমাদের এলাকার বারো তেরো জন ভাড়া নিয়ে থাকি। ভলাই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন কাণ্ড হবে, তা কখনও ভাবিনি।

গত রবিবার আমরা কারখানায় কাজ করছিলাম। শুনলাম কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে। অতসত ভাবিনি। সোমবার সকাল থেকে শুনতে পেলাম গন্ডগোল পাকছে। আমরা যেখানে কাজ করি এবং থাকি সেই এলাকার রাস্তার ধারের অনেক দোকানপাট ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যেই শুরু হয় ইট পাথর বৃষ্টি। পুলিশের সামনেই আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, লাঠি সোটা নিয়ে দাপাদাপি করে উন্মত্ত কিছু মানুষ। বিকেল পাঁচটার সময় মালিক এসে বলল, বাইরে হাঙ্গামা শুরু হয়েছে। গোলমালের আওয়াজের পাশাপাশি কানে আসে গুলির শব্দ। কারখানা ভিতর থেকে তালাবন্ধ করে আমরা ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম। সেদিন রাতটা চা বিস্কুট খেয়েই কাটিয়েছিলাম। মঙ্গলবার মালিক তাঁর একটি বাড়িতে আশ্রয় দেন। সকালে পাঁচ তলার ছাদে উঠে দেখি রাস্তা-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পাথর, ইটের টুকরো। লোকজন অস্ত্রশস্ত্র, লাঠি নিয়ে ছোটাছুটি করছে। সমস্ত বাড়ির ছাদের মজুদ পাথর, ইটের টুকরো। আমরা কারও টার্গেট হয়ে যেতে পারি এই ভয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসি। এরপর ঘরে খিল দিয়েই কাটে। মোবাইলে, খবরে জানতে পারি হিংসার আগুন ছড়িয়েছে আমরা যে এলাকায় আছি তারই চারপাশে।

এলাকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ থাকায় আমাদের না খেয়েই থাকতে হয়। একদিকে খিদের জ্বালায় পেট ছটফট করছে। এর মাঝেই বন্ধু মহম্মদ কালাম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে আমাদের দুর্দশার কথা লেখে। বুধবার দুপুর থেকে অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমাদের উদ্ধার করার কথা বলে। কিন্তু ভয়ে আমরা বেরোতে পারিনি। এ দিন দুপুরেই কোনওক্রমে চোরের মতো মালিকের ঘর থেকে আমরা নিজেদের ভাড়া ঘরে আসি। তখন পর্যন্ত পেটে একটি দানাও পড়েনি। ঘরে কিছু চাল, আর আলু সেদ্ধ করে আমরা নুন ছিটিয়ে আধপেটা করে ফ্যান ভাত খাই। সন্ধ্যায় কিছুটা চাল ভেজে খেয়েছি। মাঝে মধ্যে কানে আসে হল্লা, গুলির আওয়াজ। টিয়ার গ্যাস ফাটানো হয় আমাদের ঘরের সামনেই। ভয় আরও বাড়তে থাকে। রাত এগারোটা নাগাদ আমাদের ভাড়া বাড়িতে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যেতে চায়। তারা আসলে পুলিশ কি না, সন্দেহ হচ্ছিল। তবে ফোন আসে যে, তাঁরা সত্যিই পুলিশ। পুলিশের দুটি গাড়িতে আমরা তেরোজন উঠে পড়ি। জাফরাবাদ থানার পুলিশ আমাদের পৌনে একটা নাগাদ পৌঁছে দেয় পুরাতন দিল্লি স্টেশনে। সেখান থেকে কলকাতার ট্রেনে উঠেছি। শেষ পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছেছি। কিন্তু এখনও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে সে দিনের কথা ভেবে।

Delhi Violence CAA Protest Naoda

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}