Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

জন্মদিনের পরেই মৃত্যু ঘনিয়ে এল সাহেবের

পাড়ায়, বন্ধু  মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন বিশ্বরূপ সাহা ওরফে সাহেব। একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলেন রেশন ডিলার। বছর পাঁচেক আগে বাল্যবন্ধু সাজাহান মোল্লার হাত ধরেই পাহাড়ে চড়া।

সাহেবের ছবিতে মালা দিচ্ছেন বন্ধুরা। —নিজস্ব চিত্র

সাহেবের ছবিতে মালা দিচ্ছেন বন্ধুরা। —নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩১
Share: Save:

বেস ক্যাম্পে যখন শোনপাপড়ি কেটে তিনি জন্মদিন পালন করছেন তখন কেউ তাঁর এমন পরিণতি কল্পনা করেননি। মা জয়শ্রীদেবী বাড়িতে ছেলের দীর্ঘায়ু কামনায় পায়েস আর পাঁচ রকম ভাজা দেবতাকে উৎসর্গ করেছেন। উৎকণ্ঠায় ছিলেন তিনি। বারবার বারণ করা সত্ত্বেও তাঁর পাহাড়-পাগল ছেলে পর্বতারোহীদের সঙ্গে চলে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মায়ের যাবতীয় আশঙ্কা সত্যি করে সোমবার বাড়ি ফিরে এল একমাত্র ছেলের মৃতদেহ।

পাড়ায়, বন্ধু মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন বিশ্বরূপ সাহা ওরফে সাহেব। একটি মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলেন রেশন ডিলার। বছর পাঁচেক আগে বাল্যবন্ধু সাজাহান মোল্লার হাত ধরেই পাহাড়ে চড়া। নেশায় পড়ে গেলেন পাহাড়ের। পাঁচ বছর ধরে তিনি ট্রেকিং-এ যাচ্ছেন। সান্দাকফু ট্রেক করে এসেছেন। এই বছরই মে মাসে ট্রেক করে এসেছেন সিমলা। তার পর পরিকল্পনা হয়েছিল চন্দ্রভাগা-১৩ শৃঙ্গ অভিযানের। মা আর স্ত্রী বারবার যেতে বারণ করেছিলেন। তিনি শোনেননি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ছিল সাহেবের জন্মদিন। তার আগের দিনই কৃষ্ণনগরের ‘নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার লাভার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর ১৩ জন সদস্য পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রায় সাড়ে চোদ্দো হাজার ফুট উচুঁতে বেস ক্যাম্পে। ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে তাঁদের মধ্যে সাজাহান মোল্লা, রীতেশ সাহা ও সৌরভ সিকদার বেরিয়ে পড়েন চন্দ্রভাগা-১৩ র উদ্দেশে। সাহেবের শরীরে সমস্যা হচ্ছিল বলে বাকিরা তাঁকে নিয়ে নীচে নেমে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সঙ্গীরাই জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শনপাপড়ি কেটে তাঁর জন্মদিন পালন করার পর সকলে নীচে নামতে থাকেন।

অন্যতম সঙ্গী কৃষ্ণনগরেরই বাসিন্দা সুজয় বিশ্বাস বলছেন, “সাহেবের শ্বাসকষ্ট তখন তেমন ছিল না। একা-একাই নামছিল। বিকেলের দিকে আমরা গ্লেসিয়ার রিসার্চ সেন্টারে পৌঁছাই। সেখানেই রাতে থাকি।” তাঁর কথায়, “সেখানে চা আর খাবার খেয়ে সাহেব অনেকটাই সুস্থ হয়েছিল। পর দিন সকালে আমরা আবার নীচে নামার জন্য বের হয়েছিলাম। তখন সাহেবের জন্য একটা ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়েছিলাম। শ্বাসকষ্ট হলেও তখন ও নিজেই হাঁটতে হাঁটতে নামছিল আর আমরা ওর মুখের সামনে অক্সিজেন স্প্রে করছিলাম। কিন্তু কিছুটা নামার পর ও আর পারল না। নেতিয়ে পড়ল। আমরা অক্সিজেন স্প্রে করেও বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না।”

পাহাড়ে কখন কী হতে পারে

• সাড়ে চোদ্দো ফুট উচ্চতাতেও অনেক সময় অক্সিজেন কমে যাওয়ায় কারও কারও উচ্চতাজনিত সমস্যা দেখা দেয়

• বমি, অত্যাধিক ক্লান্তি, ঘুমিয়ে পরা, খেতে না চাওয়ার মতো লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে হবে, তেমনটা বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থকে নীচে নামিয়ে আনতে হবে। দেরি হলেই ক্ষতি

• পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে হবে অভিজ্ঞতা দিয়ে

• পাহাড়ে যেতে হলে শরীরচর্চা করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, সাঁতার ও দৌড় করতে হবে
শ্বাসকষ্ট, হাড়ের সমস্যা, দুর্বল হৃদযন্ত্র বা ফুসফুস, রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে চলবে না

১৯ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ পাহাড়েই মারা যান সাহেব। ক্লাবের সম্পাদক প্রশান্ত ঘোষ ফোন করে সাহেবের স্ত্রী লক্ষ্মীকে মৃত্যু সংবাদ দেন। সোমবার যখন মৃতদেহ কৃষ্ণনগরের বাড়িতে আসে তখন সকলেই শোকে পাথর। সাহেবের ছেলে আদিত্যর বয়স ছয়। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে লক্ষ্মী বিড়বিড় করছিলেন, “এক জনকে কেড়েছে পাহাড়। আমি আর কিছুতেই ছেলেকে পাহাড়ে চড়তে দেব না।”

মাত্র সাড়ে চোদ্দো হাজার ফুট উচ্চতায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে? এভারেস্ট জয়ী পর্বোতারোহী বসন্ত সিংহ রায় বলছেন, “হতে পারে। একে বলে, উচ্চতাজনিত সমস্যা। আমাদেরও একাধিক বার হয়েছে। তখন অসুস্থকে সঙ্গে-সঙ্গে নীচে নামিয়ে আনতে হয়।” তিনি বলেন, “এর কিছু লক্ষণ আছে। সেটা অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়। এ ক্ষেত্রে হয়তো ওঁরা পরিস্থিতি বুঝতে পারেননি। যখন বুঝতে পেরেছেন তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Trekking Krishnagar Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy