সিপিএমের পথ অররোধ। রবিবার বাদকুল্লায় ধানহাটে। নিজস্ব চিত্র
দলের সক্রিয় কর্মী খুনের ঘটনায় সরাসরি শাসকদলের দিকেই আঙুল তুলেছে সিপিএম। নিহত সিপিএম কর্মী বাবুলাল বিশ্বাসের পরিবারের তরফেও খুনের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করা হয়েছে। তৃণমূল পাল্টা সিপিএমের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল বলে দাবি করছে। আজ তাহেরপুরে বন্ধ ডেকেছে সিপিএম।
খুনের মূল তিন অভিযুক্ত স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জিত ঘোষ ও তার দুই ছেলে। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক। সিপিএমের দাবি, সঞ্জিত তৃণমূল কর্মী। কিন্তু তৃণমূল জানিয়েছে, কোনও দিন সে তৃণমূল করেনি, বরং এক সময় সিপিএম করত। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, “সঞ্জিত আগে সিপিএম করত। পরে তৃণমূল করত কিনা জানা নেই। আর পঞ্চায়েত নির্বাচন তো মিটে গিয়েছে অনেক আগে। সেই সময়ের শত্রুতা এখন কেন আসবে?” এর পাল্টা আবার সিপিএম নেতা সুপ্রতীপ রায়ের বক্তব্য, “সঞ্জিত কোনও দিনই সিপিএম করত না। সে আগাগোড়া বামবিরোধী।”
সিপিএমের নদিয়া জেলা সম্পাদক সুমিত দে রবিবার এক প্রেস বিবৃতিতে দাবি করেছেন, ‘তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী দিয়েই খুন করা হয়েছে গ্রামের জনপ্রিয় এই পার্টি কর্মীকে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাঁসখালি ব্লকে লুটের ভোটপর্বের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাবুলাল বিশ্বাসের নেতৃত্বে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছিলেন বাদকুল্লা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দোসোতিনা গ্রামের মানুষ। শত বাধা উপেক্ষা করে তাঁর স্ত্রী মৌসুমী বিশ্বাস মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়ে লড়াই করেছেন।’ খুনের প্রতিবাদে আজ সোমবার তারা তাহেরপুর বন্ধ ডেকেছে। পাশাপাশি জেলার সর্বত্র দলের তরফে প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে। গত শনিবার ভরসন্ধ্যায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন বাবুলাল। পেশায় ছিলেন দিনমজুর। সিপিএমের বহু দিনের দলীয় সদস্য ছিলেন। তাঁর স্ত্রী মৌসুমী বিশ্বাস গত পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম প্রার্থীও হন।
নিহতের পরিবার সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই শাসকদলের তরফ থেকে বাবুলালকে নানা ভাবে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের তাহেরপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুপ্রতীপ রায় বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই ওই এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিল বাবুলাল। তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের লোকজনই ওঁকে খুন করেছে।” তাঁর স্ত্রী মৌসুমীও বলেছেন, “তৃণমূলই রয়েছে আমার স্বামীকে খুনের পিছনে। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে এবং পরেও তাকে খুনের হুমকি দিয়েছে। এলাকারই তৃণমূলের লোক আছে এই খুনের পিছনে।” তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, পঞ্চায়েত ভোট কেটে গিয়েছে এক বছর আগে। রাজনৈতিক কারণে খুন হলে এখন খুন হবে কেন? বাদকুল্লা ২ পঞ্চায়েত এলাকাটি হাঁসখালি ব্লকের অন্তর্গত, তবে থানা তাহেরপুর। আবার তাদের বিধানসভা কৃষ্ণগঞ্জ। এই জটিল মানচিত্রবিশিষ্ট এলাকায় পরিবর্তনের সময় থেকেই প্রভাব তৃণমূলের। কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা ২০১১ সাল থেকেই তৃণমূলের হাতে ছিল। ২০১৬ সালেও এখানে বিপুল ভোটে জয়ী হয় তারা। কিন্তু সেখানেই উলটপুরাণ হয়ে যায় ২০১৯ এর বিধানসভা উপনির্বাচনে। জিতে যান বিজেপি প্রার্থী।
এই এলাকায় সাংগঠনিকভাবে তুলনায় বেশ শক্তিশালী সিপিএম। লোকসভা ভোটের পরে হাঁসখালি ব্লকে তৃণমূলে ভাঙন ধরে। তাতে বাদকুল্লাও ছিল। রাজনৈতিক মহলের খবর, এই এলাকায় সিপিএমকে পাশে নিয়ে বিজেপি যাতে আর শক্তিশালী না-হয় তার জন্য তৃণমূল মরিয়া ছিল। স্বভাবতই বাবুলালের মতো তরুণ সিপিএম নেতারা ‘টার্গেট’ হওয়া স্বাভাবিক। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy