প্রতীকী ছবি।
অভিযোগ উঠছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। একাধিক বার নদিয়ার স্বাস্থ্যকর্তারা আচমকা হানাও দিয়েছিলেন। উপযুক্ত প্রমাণ না মেলায় সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু শক্তিনগর ব্লাড সেন্টার থেকে দালাল মারফত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সংহোমে রক্ত পৌঁছে যাচ্ছে বলে সমাজমাধ্যমে চাউর হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। জেলার আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি রবিবার থেকেই তদন্ত শুরু করেছে।
জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বড় রক্তকেন্দ্র হল শক্তিনগর ব্লাড সেন্টার, যেখানে প্রায় দেড় হাজার প্যাকেট রক্ত সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিদিন সেখান সেন্টার থেকে ৭০-৮০ প্যাকেট রক্ত দেওয়া হয় বলে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু এই কেন্দ্র থেকে রক্ত পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠেছে। কার্ড দিলেও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্গে করে রক্তদাতা নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে। বহু ভুক্তভোগীর অভিযোগ, রক্তের মজুত, চাহিদা ও গ্রুপের উপর নির্ভর করে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে দালালদের কাছ থেকে এক প্যাকেট রক্ত কিনতে হচ্ছে। ব্লাড সেন্টারের এক শ্রেণির কর্মীর কাছ থেকে দালাল সেই রক্ত পাচ্ছে এক থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দিনে দিনে নেপাল, রাজু, শুভঙ্কর, জয়, অসীম, মঙ্গল, দেবেন, কমল, ভাইপো, উদয়, প্রতাপ নামে কিছু দালাল হাসপাতাল চত্বরে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছে। এরা সকলে কোনও না কোনও নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী। এর বাইরেও কল্যাণী, ব্যারাকপুর, বহরমপুর থেকেও দালাল আসে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। এদের মাধ্যমে রক্ত বেচে কোনও-কোনও দিন ৪০-৫০ হাজার টাকাও ওঠে।
শক্তিনগর ব্লাড সেন্টারে এক জন চিকিৎসক, ন’জন টেকনোলজিস্ট ও দু’জন কাউন্সেলর আছেন। ভুক্তভোগী মানুষজনের অভিযোগ, এঁদের বেশির ভাগই এই দালাল চক্রে যুক্ত। তবে কৃষ্ণনগরের ও রানাঘাটের বাসিন্দা দুই স্থায়ী পদে কর্মরত টেকনিশিয়ান মূল পান্ডা। এঁদেরই কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপ (আনন্দবাজার সেটির সত্যতা যাচাই করেনি) সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই হইচই শুরু হয়। কোন গ্রুপের রক্ত কত টাকায় বিক্রি হয় তা-ও ওই ক্লিপে শোনা গিয়েছে।
জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতাল প্রয়োজনে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টোর মধ্যে (রবিবার দুপুর ১২টা) ওই কেন্দ্র থেকে রক্ত কিনতে পারে। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে সেই নিয়ম শিকেয় উঠেছিল। বিভিন্ন দিক থেকে বিষয়টি জেলা কর্তাদের কানে আসতে শুরু করে। কয়েক বার জেলার রক্ত কেন্দ্রগুলির দায়িত্বে থাকা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (দ্বিতীয়) অসিত দেওয়ান শক্তিনগর ব্লাড সেন্টারে আচমকা হানাও দেন। কিন্তু হাতেনাতে কাউকে ধরতে পারেননি। অসিতবাবু বলেন, “একাধিক বার আচমকা হানা দিলেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে কিছু করা যায়নি। এ বার দেখা যাক তদন্তে কতটা কী উঠে আসে।”
আপাতত অসিতবাবুর নেতৃত্বেই জেলা হাসপাতালের সুপার, কৃষ্ণনগর মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেডএলও এবং ডিএমসিএইচও-কে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপনকুমার দাস বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। তাতে যা তথ্য মিলবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
জেলার কর্তাদের অনেকেরই দাবি, হাসপাতাল সুপার সোমনাথ ভট্টাচার্য বা ওই রক্ত কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সোমনাথ সরকার ঘটনার দায় অস্বীকার করতে পারেন না। ওই চিকিৎসকের বক্তব্য, “সমস্ত নথিপত্র, হিসাব ঠিকঠাক আছে। এর বাইরে যদি কেউ কিছু করে, আমি ধরব কী করে?” আর সুপার বলেন, “তদন্ত হচ্ছে। এখনই কোনও মন্তব্য করব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy