আপ্যায়ন। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় সড়কের পাশে জমজমাট ধাবায় এখন তালা। লকডাউনের ধাক্কায় মনজিৎ সিংহ মনির চেনা ধাবার টেবিল পড়েছে হাইওয়ের কোল ঘেঁষে গাছের ছায়ায়। তবে ধাবার চেহারার সঙ্গে চরিত্রও কিছু পাল্টেছে। তাঁর রুটি-তরকা-চিকেন বাটার নানের আতিথ্য এখন বদলে গিয়েছে ডাল-ভাত-পালং শাকে।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রঘুনাথগঞ্জের মঙ্গলজানে মনজিতের ধাবা। তবে লকডাউনের মেয়াদ শিথিল হতে ধাবা খুললেও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে তাঁর সাম্প্রতিক নিখরচার ‘অতিথি ভোজনালয়’ হাইওয়ে ধরে ছুটতে থাকা পণ্য বোঝাই ট্রাকের চালক ও খালাসিদের জন্য। সোমবার সেই ভোজনালয়ে আতিথ্য পেলেন ৩১ জন। মনজিৎ বলছেন, “যত দিন না লকডাউন ওঠে, রাস্তার পাশের হোটেলগুলি স্বাভাবিক ভাবে না খোলে, ততদিন চালিয়ে যাব এই ভোজনালয়। তবে না, তার জন্য পয়সা নিতে পারব না।”
মণিপুরে ওষুধ নিয়ে গিয়েছিলেন ইয়াজদানি সর্দার। সেখানে ওষুধ নামিয়ে ফিরছিলেন। বলছেন, “এত দূরের রাস্তায় হোটেল-ধাবা কিছুই খোলা নেই। কোথাও মুড়ি, কোথাও শসা খেয়ে কাটাতে হয়েছে। মনজিৎ সিংহের এই ধাবায় আগেও কত দিন থেমে স্নান-খাওয়া সেরেছি। এ দিন ফিরছি, সাড়ে ১২টা নাগাদ দেখি রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে সিংজি হাত তুলে ট্রাক থামাচ্ছেন। ভাবলাম কিছু বলবেন বুঝি, কিন্তু ট্রাক এক পাশে দাঁড় করিয়ে গিয়ে দেখি ধাবার সামনেই বেশ কয়েকটি চেয়ার টেবিল সাজানো। ধাবা কর্মচারীরা নেই। সিংজি একাই শাল পাতা পেতে, গ্লাসে জল বাড়িয়ে দিলেন। গরম গরম ভাত, ডাল, শাক, পাঁচ মিশেলি তরকারি নিজেই পাত পেড়ে খাওয়ালেন।” অসম থেকে আসা দুর্যোধন দাসও বলছেন, ‘‘খাওয়ার পরে পকেট থেকে টাকা বের করতেই জিভ কাটলেন মনজিৎ। বলছেন, ‘‘অনেক তো হল ক’দিন না হয় আমার ভোজনালয়ে তোমরা খেলে!’’ মনজিৎ বলছেন, ‘‘লরি চালকদের টাকায় এত দিন এত কিছু করেছি। সংসারও চলে তাতেই। ওঁদের জন্যও তো আমার কিছু করার আছে, তাই এ ক’দিন না হয় ওঁদের একটু সেবা করি। সামান্য ভাত-ডালই তো খাওয়াচ্ছি।’’তারপর হাসতে হাসতে যোগ করছেন, ‘‘আরে ইয়ার বিজনেস তো অনেক হল, ক’টা দিন একটু সেবা করতে দাও না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy