Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

ব্লকে একটি দোকানে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন

সাধারণত, কোনও রোগী হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কিনতে কোনও ওষুধের দোকানে গেলে, সেই দোকান থেকেই তাঁকে বলে দেওয়া হচ্ছে কোথায় গেলে তিনি সেই ওষুধ পাবেন।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৯
Share: Save:

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এখন আর সব ওষুধের দোকানে মিলছে না। এমনকি এলাকার বড় দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর থেকে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিপদ মাথা চাড়া দেওয়ার পর থেকেই এই ওষুধটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। জেলা সহকারী ডিরেক্টর অফ ড্রাগ কন্ট্রোল সুভাষচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পরে আপাতত এই কম্পোজিশনের ওষুধ বিক্রির উপরে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে একটি রেজিস্টার্ড দোকানে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’ ইন্সপেক্টর অফ ড্রাগ কন্ট্রোল বিশ্বরূপ রায় বলেন, ‘‘ওষুধের দোকানদার, ফার্মাসিস্টদের বলা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের প্রেশক্রিপশন অনুযায়ী একজন রোগী সর্বাধিক পাঁচটি করে ওষুধ দেওয়া যাবে। প্রেশক্রিপশনের জেরক্স সহ সেটি নথিবদ্ধ করেও রাখতে হবে।’’

মুশকিল হয়েছে সেখানেই। প্রথমত, ব্লকের কোন দোকানে এই ওষুধ পাওয়া যাবে তা অনেকেই জানতে পারছেন না। সাধারণত, কোনও রোগী হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কিনতে কোনও ওষুধের দোকানে গেলে, সেই দোকান থেকেই তাঁকে বলে দেওয়া হচ্ছে কোথায় গেলে তিনি সেই ওষুধ পাবেন। কিন্তু যেহেতু ব্লকে একটি মাত্র দোকানেই তা পাওয়া যাচ্ছে, তাই সেখানে যেতে সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সেলিম মালিক বলেন, ‘‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন মূলত ম্যালেরিয়ার ওষুধ হলেও এসএলই, বিভিন্ন প্রকার আর্থারাইটিস, ইউ ফিভার, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং নার্ভের কিছু সমস্যায় চিকিৎসকরা এই ওষুধটি দেন। টানা খেতে হয়। তাই হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ হলে রোগীরা সমস্যায় পড়তে পারেন।

হরিহরপাড়ার স্বরূপপুরের বাসিন্দা সমর হালদারের স্ত্রী এসএলই রোগ রয়েছে। তিনি চিকিৎসকের নির্দেশ মতো প্রায় ছ’বছর ধরে দু’বেলা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খাচ্ছেন। সমরবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের ব্লকে যে দোকানটিতে এই ওষুধ পাওয়া যায়, সেটি আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। লকডাউনে যাতায়াত করা খুবই সমস্যার। তাই আমরা বিপাকে পড়েছি।’’ হরিহরপাড়ার আর এক বাসিন্দা জাহাঙ্গির বিশ্বাসের স্ত্রীও আর্থারাইটিসের জন্য এই ওষুধ খান। তিনি বলছেন, ‘‘আমার স্ত্রীকে রোজ এই ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু প্রেসক্রিপশন দেখালেও কেবল পাঁচটি করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তাই আমাকে এই লকডাউনের মধ্যেই প্রতি তিন দিন অন্তর গিয়ে ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে।’’ এমনই এক রোগী হাফিজা বিবি বা সোমা হালদারদের মতো এসএলই বা আর্থারাইটিসের রোগীদের বক্তব্য, বাড়ির লোকের উপরে খুবই হয়রানি করতে হচ্ছে। হাফিজাবিবি বলেন, ‘‘আমার ওষুধ আনতে আমার স্বামীকে দু‌’দিন অন্তর দূরের দোকানে যেতে হচ্ছে। তাতে তিনি তো বিপদের মুখে পড়ছেন। যদিও মাস্ক পরে যাচ্ছেন, তবু ভয় কাটছে না। আরও ভাল কোনও ব্যবস্থা করা দরকার, যাতে আমাদের মতো রোগীরা সহজে এই ওষুধ পেতে পারেন।’’ জাহাঙ্গিরের বক্তব্য, ‘‘দরকার হলে এমন রোগীদের তালিকা তৈরি করে নিক সরকার। তার পরে তাদের যাতে নিয়মিত ওষু‌ধের জোগান দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা করুক। না হলে আমাদেরও তো লকডাউন ভাঙতে হচ্ছে।’’

সুভাষচন্দ্র মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘আপাতত এই ভাবেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সংগ্রহ করতে হবে। আপাতত এই ওষুধ সব দোকানে দেওয়া যাবে না।’’ হরিহরপাড়া হাসপাতাল মোড়ের ওষুধ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘দিন দশেক আগে এই ওষুধ বিক্রির অনুমতি দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল। দফতরের নির্দেশ মতো বৈধ প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসলে পাঁচটি করে ট্যাবলেট দিচ্ছি।’’

চিকিৎসক সেলিম মালিক বলেন, ‘‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন যেহেতু বিভিন্ন রোগেই লাগে, তাই ওষুধটি দেওয়ার নিয়ম শিথিল করলে ভাল হয়।’’

জেলা প্রোগ্রোসিভ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের হরিহরপাড়া জোনের সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, ‘‘এক সময় ওষুধটি একেবারেই পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা তখন ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের সঙ্গে কথা বলি। তার পরে এখন তাও ব্লকে একটি করে দোকানে পাওয়া যাচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy