নিজস্ব চিত্র
খোদ থানার সামনে ত্রিপল খাটিয়ে কয়েক দিন ধরে পড়েছিলেন ঠাঁইহারা দম্পতি। শেষমেশ খবরের কাগজে ছবি বেরনোর পরে মঙ্গলবার প্রশাসনের কর্তাদের হুঁশ ফিরল।
দম্পতির গতি হল। কিন্তু কোথায়? না, কৃষ্ণনগর কর্মতীর্থে কোয়রান্টিন সেন্টারে, যেখানে করোনা-যোগে তালিকাভুক্ত সন্দেহভাজনদের রাখা হয়! কেন তাঁদের সেখানে পাঠানো হল, কেন তাঁদের অন্য ঠাঁই জুটল না, তা নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাপি লেদ ও শিখা লেদ নামে ওই দম্পতির বাড়ি নদিয়ার চাকদহ পালপাড়ায়। তাঁরা মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে একটি হোটেলে কাজ করতেন, সেখানেই থাকতেন। তার আগে বাসা ভাড়া করে থাকতেন বীরভূমের রাজগ্রামে। কিন্তু বছরখানেক আগে থেকে ধুলিয়ানেই পাকাপাকি থাকতে শুরু করেন। তাঁরা জানান, লকডাউনের ফলে হোটেল বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মালগাড়িতে চেপে রাজগ্রামে চলে গিয়েছিলেন। স্টেশনে দু’দিন থাকার পরে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আরও কয়েক জনের সঙ্গে তাঁদের আশ্রয় হয় একটি স্কুলবাড়িতে। বাপিরা জানান, গত ১৮ এপ্রিল রাজগ্রাম থেকে সরকারি বাসে চেপে দুপুরে তাঁরা কৃষ্ণনগরে পৌঁছন। সেখান থেকে লরিতে চেপে পৌঁছন চাকদহের পালপাড়ায়। সেখানে তাঁর দাদা থাকেন। গিয়ে দেখেন, দাদা-বৌদি নেই, দরজায় তালা। তাঁদের ফোন নম্বর না-থাকায় যোগাযোগ করতে না-পেরে তাঁরা ফের একটি আনাজের লরিতে চেপে সন্ধে নাগাদ কৃষ্ণনগরে চলে আসেন। সেই থেকেই কোতোয়ালি থানার সামনে গাছতলায় তাঁদের আশ্রয়। পরের দিনই থানার সামনে কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসকের দেখা পান তাঁরা। বাপি জানান, তিনি তাঁদের কোনও ভাবে পালপাড়ায় ফিরে যেতে বলেন। আর পুলিশের হাতে টাকা দিয়ে তাঁদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে বলেন। বাপি বলেন, “এক জন এসে দু’বেলা খাবার দিয়ে যেত। পুলিশকর্মীরা এসে খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু কেউই থাকার ব্যবস্থা করেননি।” সোমবার তাঁরা আবার মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। বাপির দাবি, তিনি তাঁদের বীরভূমে ফিরে যাওয়ার বাসের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বিকল্প আশ্রয় মেলেনি।
মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হলে একটা দোকানের সামনে টিনের ছাউনির তলায় গিয়ে বসে থাকেন রাতভর। ঘটনাচক্রে, সকাল হতেই খবরের কাগজে দেখা যায় দম্পতির ছবি। কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। এবং দুপুরে তাঁদের কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন উঠছে, কোয়রান্টিন সেন্টার কি সাধারণ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে? সেখানে কারও সংসর্গে যদি ওই দম্পতি করোনা-আক্রান্ত হন, তার দায় কে নেবে? কৃষ্ণনগর সদর মহকুমাশাসক মনীশ বর্মার যুক্তি, “কোয়রান্টিনে রাখার শর্তগুলির একটা হল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতের ইতিহাস। ওঁদের তা আছে।” কিন্তু ওঁদের তো আগেই বাসে ওঠার সময় ও বাস থেকে নামার পরে ‘স্ক্রিনিং’ করা হয়েছিল। তেমন সন্দেহজনক কিছু থাকলে তো আগেই কোয়রান্টিনে পাঠানো হত। এখন কেন? এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। তবে মহকুমাশাসকের দাবি, “কোয়রান্টিন সেন্টারে ওঁদের কোনও ভাবেই সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
করোনা-সংসর্গ রহিত কাউকে কি শুধু আশ্রয় হিসেবে কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখার অনুমতি দিতে পারে স্বাস্থ্য দফতর? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “না। কোনও না কোনও লিঙ্ক থাকতেই হবে।” তা হলে রাখা হল কী ভাবে? কর্তার জবাব, “বিষয়টি পুরো না জেনে মন্তব্য করব না।”
মহকুমা প্রশাসন সূত্রের দাবি, জেলা পুলিশের তরফেই দম্পতিকে কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখার সুপারাশি এসেছিল। কেন? তারও কোনও সদুত্তর মেলেনি। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই শুধু বলেন, “এ ব্যাপারে খোঁজ না নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy