বিডিওর হাতে চেক তুলে দিচ্ছেন সুখেন। নিজস্ব চিত্র
পরের জমিতে পেঁয়াজের চাষ করে কিছু টাকা ঘরে এসেছিল। কিন্তু তার মধ্যে থেকেই কিছু টাকা সরিয়ে রেখেছিলেন মানুষটি।
দরিদ্র মানুষদের জন্য আর্থিক সাহায্য হিসাবে সে টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তেহট্ট মুসলিম পাড়ার সুখেন বিশ্বাস। অর্থনৈতিক বিত্ত বা স্বাচ্ছন্দ্য নয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতে যে কেবল মাত্র মানসিকতাই যথেষ্ট, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই মানুষটি।
বর্তমানে লকডাউনের মধ্যে মহামারির সঙ্কট পরিস্থিতি রীতিমতো ভাবাচ্ছে ওই ষাট বছরের মানুষটিকে। শহরের বস্তিতে থাকা মানুষ অনাহারে রয়েছেন, কষ্টে-খাদ্যাভাবে রয়েছেন গ্রামের শ্রমজীবী, মজুর মানুষেরাও। এই কারণেই কষ্ট করে হলেও তাঁর রোজগারের পাঁচ হাজার টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে চান তিনি। মঙ্গলবার তেহট্ট ১-এর বিডিও অচ্যুতানন্দ পাঠকের কাছে একটি খামে সেই টাকা ভরে তাঁর হাতে তুলে দেন।
সুখেন বলেন, ‘‘আমি টেলিভিশনে দেখেছি, আমার এলাকার, বস্তির লোকগুলো খেতে পাচ্ছেন না আমার মতোই। আমার কাছে পেঁয়াজ বেচে যেটুকু টাকা এসেছে, তা দিয়ে চালিয়ে নিতে পারব কোনও রকমে। কিন্তু ওঁরা খুব কষ্ট পাচ্ছেন।’’
সুখেন বিশ্বাস জানালেন, বাড়িতে তাঁর এক ছেলে ও স্ত্রী রয়েছেন। পরের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতে হয় মানুষটিকে। কোনও রকমে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে। ব্যাঙ্কের পাসবই নেই, চেকও না। তিনি শুনেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দিতে গেলে চেকবুক লাগে। কিন্তু সেটা তাঁর না থাকায় উৎকণ্ঠায় পড়ে যান মানুষটি।
কিন্তু নিজে শ্রমজীবী মানুষ হয়েও দরিদ্র, নিরন্ন মানুষের পাশে থাকার ভাবনা ভেবেছেন যিনি, তাঁকে আটকায় সাধ্য কার! সুখেন এই সময়ে শরণাপন্ন হন রঘুনাথপুর অঞ্চলের সমাজকর্মী প্রশান্ত বিশ্বাসের। প্রশান্তই তাঁকে মঙ্গলবার ব্লক অফিসে নিয়ে আসেন বিডিও-র হাতে ত্রাণের টাকা তুলে দিতে।
এ দিন প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘সুখেনবাবু পরের জমিতে কাজ করে কষ্টের মধ্যে দিন কাটান। পেঁয়াজের চাষ করে যা লাভ হয়েছে, তার অধিকাংশই তিনি দান করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।’’
তেহট্ট ১-এর বিডিও অচ্যুতানন্দ পাঠক বলেন, ‘‘সুখেনবাবুর হাত থেকে টাকাটি নিয়ে আমি নিজেই খুশি হয়েছি। সাধারণ দরিদ্র মানুষদের জন্য এই ভাবনা ভবিষ্যতে আরও অন্য মানুষকে ভাবাতে সক্ষম হবে। সুখেনবাবুকে উদাহরণ হিসাবে ধরে আরও অনেকে হয়তো এগিয়ে আসবেন এই কাজে।’’
এই খবর শুনে তেহট্ট বিধানসভার বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত ওই পেঁয়াজ চাষিকে ফোনে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এই আকালের দেশেও যৌথখামারের স্বপ্ন দেখছেন এক চাষি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy