হৃদয় মাঝি। নিজস্ব চিত্র
স্থাবর সম্পত্তি বলতে এক চিলতে বাড়ি আর জোড়াতালি দেওয়া একখানা নৌকা। শিয়ালমারি নদীতে সেই নৌকা ঠেলেই সংসার চলে ডোমকল থানার কুপিলা গ্রামের হৃদয় মাঝির। শুখা মরসুমে বাঁশের মাচা দিয়ে নদী পারাপার করেন গ্রামবাসীরা। আর বর্ষার সময় তাঁর নৌকায় করেই গ্রামবাসীরা শিয়ালমারি পার হন। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ সীমান্তের এই ঘাটে পারানি থেকে যা জোটে, দিনের শেষে সেই টাকা নিয়েই ঘরে ফেরেন হৃদয়। এ ভাবেই কষ্টেসৃষ্টে চলে তাঁর সংসার। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে চলা লকডাউনই তাঁর সমস্ত হিসেবনিকেশ ওলটপালট করে দিয়েছে। লকডাউন চলায় সব কাজকর্ম বন্ধ। সংসার চালাতে গিয়ে তাই হিমশিম খাচ্ছে হৃদয়ের পরিবার। রাজ্য সরকারে দেওয়া রেশনের চাল-ডাল জুটেছে। তাই দিয়েই কোনওরকমে চলছে তাঁদের।
তবে শুধু লকডাউন নয়, নদিয়ার তেহট্টের কয়েক জন বাসিন্দার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রশাসন দুই জেলার সীমান্তের ঘাটগুলি বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপর থেকেই যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ জয়রামপুর ঘাটে। হৃদয় মাঝি বলেন, ‘‘বংশানুক্রমে এই ঘাটে নৌকা চালিয়ে আমাদের সংসার চলে। আর কোনও উপার্জনের পথ নেই। ঘাট বন্ধ হওয়ায় হাঁড়ি চড়ছে না উন্নুনে। যেটুকু রেশনের চাল-আটা পাচ্ছি, তাই একবেলা খেয়েই বেঁচে রয়েছি।’’
একদিকে নদিয়ার জয়রামপুর, অন্যদিকে মুর্শিদাবাদের কুপিলা গ্রাম। মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে সরু সুতোর মতো শিয়ালমারি নদী। আর সেই নদীতে কয়েক দশক ধরে ফেরি পারাপার করে গ্রামের মাঝি পরিবার। খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘাট না-হওয়ায় এমনিতেই যাত্রীদের আনাগোনা কম। তা সত্ত্বেও ঘাটের পারানি থেকে যে আয় হত, হৃদয় ছাড়াও আরও দুই মাঝির পরিবারের সংসার চলে যেত টেনেটুনে। হৃদয় বললেন, ‘‘চার সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। ছ’জনের ভঙাত জোটাতে গিয়ে কী যে অবস্থা হচ্ছে। তা আমিই জানি। লকডাউন যদি দ্রুত না ওঠে, তবে অনাহারেই মরে যাব।’’
হৃদয়ের স্ত্রী ববিতা বলছেন, ‘‘একেই টানাটানির সংসার। সারাদিন আমার স্বামী হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন সংসার চালাতে। কিন্তু এক মাস ধরে রোজগার বন্ধ। কানাকড়ি পয়সাও হাতে নেই। রেশন থেকে চাল-আটা পেয়েছি। আর ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে কয়েক কেজি চাল, ডাল, আলু তেল দেওয়া হয়েছিল, তাতেই চলছে কোনওরকমে।’’ লকডাউন কবে ওঠে তার অপেক্ষায় হৃদয়ের পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy