ছবি: পিটিআই।
শনিবার বিকেল পাঁচটা।
কৃষ্ণনগর সদর মোড় দিয়ে যাচ্ছিল এক যুবক। মুখে মাস্ক নেই। অনেকটা বিকেলের হাওয়া খাওয়ার ঢঙে তার হাঁটা। কিন্তু বিধি বাম। টহলদার পুলিশের নজরে পড়তেই কান ধরে ওঠবোস করে তবে রেহাই।
হরেক রকমের মাস্কে এখন ছেয়ে গিয়েছে শহর থেকে গ্রাম। দশ থেকে সাড়ে চারশো টাকা— নানা দামের নানা মানের মাস্কে ছয়লাপ ওষুধ থেকে মুদির দোকান। কিন্তু যাঁদের জন্য এই মাস্ক, তাঁরা কি আদৌ তা ঠিক মতো ব্যবহার করছেন?
লকডাউনে বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও ধানতলা থেকে ধুবুলিয়া, তেহট্ট থেকে তাহেরপুর— শনিবারের ছবিটা হল, মাস্কে নাক-মুখ ঢাকা মোটেই অভ্যেসে আসেনি অনেকেরই। কেউ মাস্কের বদলে রুমাল বা গামছা মুখে জড়িয়ে ঘুরছেন। কেউ মাস্ক থাকলেও থুতনির নীচে নামিয়ে দিব্যি চা-বিড়ি-সিগারেট খাচ্ছেন রাস্তার ধারে। এরই মধ্যে অতি সাবধানী কেউ কেউ আবার ‘এন৯৫’ মাস্ক মুখে বেঁধে বাজার থেকে আলু-পটল কিনে বাড়ি যাচ্ছেন।
শনিবার দুপুরে দত্তপুলিয়ায় এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলাকে দেখে গাড়ি থামায় পুলিশ। মহিলার মুখে মাস্ক নেই। দোকানের মালিককে পুলিশ বলল, ‘মুখে মাস্ক না থাকলে কাউকে জিনিস দেবেন না।’ মুখে আঁচল চাপা দেওয়াই যথেষ্ট মনে হওয়ার এতদিন মাস্ক ব্যবহার পরেননি ওই মহিলা। এ দিন বাধ্য হয়ে আগে মাস্ক কিনলেন, তার পরে বাকি সব কেনাকাটা হল।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দেওয়ার আগে কয়েকটা দিন পুলিশের বেশ গা-ছাড়া ভাবই চোখে পড়ছিল জেলা জুড়ে। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে পুলিশকে কয়েকটি জায়গায় বেশ সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে। নবদ্বীপে তারা মাস্ক ছাড়া জিনিস বিক্রি বন্ধের নোটিস দোকানে-বাজারে ঝোলাতে শুরু করেছে।
এ দিনই চাকদহের শিমুরালি চৌমাথায় মাস্ক না পরা লোকজনকে ধরতে হানা দেয় পুলিশ। রানাঘাটের বিভিন্ন জায়গায় বাজারে ও রাস্তাতেও তাদের একই ভূমিকায় দেখা যায়। মদনপুর ভেন্ডার সমিতির সভাপতি প্রাণকৃষ্ণ বাছার বলেন, “মদনপুর আনাজের হাটে বেশ ভিড় হচ্ছে। কেউ লকডাউন মানছে না। পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।”
নবদ্বীপেও সকাল থেকে ভিড়ের কমতি নেই পথেঘাটে। টোটোর সংখ্যা লকডাউনেও সবচেয়ে বেশি সেখানে। তবে মুখে মাস্ক পরা নিয়ে সমস্যা তুলনায় কম। তবে পুরুষদের তুলনায় আবার মহিলাদের মধ্যে মাস্ক পড়ার প্রবণতা কম। ঘিঞ্জি বড়বাজারে মাস্ক ছাড়াই বাজার করতে-করতে মধুমিতা দেবনাথ বলেন, “মাস্ক পড়লে আমার শ্বাসকষ্ট হয়। তার চেয়ে শাড়ির আঁচল অনেক বেশি কাজ দেয়।”
করিমপুরেও অনেকে এখনও মাস্ক মুখে না দিয়ে রাস্তায় ঘুরছেন। তবু যদি বা পুরুষদের মাস্ক থাকে, মহিলাদের বেশির ভাগ আঁচল-সম্বল। ব্যাঙ্কের লাইনেও এক ছবি। বাজারে বিক্রেতা-দোকানদার সকলেই মাস্ক পরছেন। কিন্তু ক্রেতাদের সকলের মাস্ক নেই। গ্রামাঞ্চলে ছবিটা আরও খারাপ। কেউ কেউ গামছায় মুখ ঢেকে মাঠের কাজে যাচ্ছেন। বহু মানুষই মাস্ক ব্যবহার করছে না। কিছু জায়গায় পথচলতি মানুষের হাতে এ দিন মাস্ক তুলেও দিয়েছে পুলিশ।
তবে শান্তিপুর বা ফুলিয়ায় আগের তুলনায় মাস্কের ব্যবহার এখন বেশিই নজরে পড়ছে। কিছু দিন আগেও বহু জন মাস্ক ছাড়া রাস্তায় ঘুরতেন। গত কয়েক দিনে সেই ছবি বদলেছে অনেকটাই। কারও ক্ষেত্রে মাস্ক না থাকলে কাপড় বা রুমাল-জাতীয় কিছু দিয়ে মুখ চাপা দিয়ে চলছেন। তবে অনেকেরই মাস্কের উপর দিয়ে এখনও নাকের ডগা উঁকি দিচ্ছে। বিপদের ভয় যখন বেশি, অর্থাৎ রাস্তায় কারও সঙ্গে কথা বলার সময়ে মাস্ক একটু সরিয়ে ‘টুক’ করে বলে নিচ্ছেন অনেকে।
ভাইরাসের পক্ষে ওই একটু ফাঁকই যে কত বড় সিংহদুয়ার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy