Advertisement
২১ অক্টোবর ২০২৪
Jalangi River

জলঙ্গি বাঁচাতে জলে পাহাড়িরা

আইএমএফ এবং নদীপ্রেমী সংগঠন ‘সেভ জলঙ্গি’-র উদ্যোগে আগামী ২২-২৫ অক্টোবর নদিয়ার পলাশিপাড়া থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। পলাশিপাড়া থেকে শুরু হয়ে চাঁদের হাট, বড় আন্দুলিয়ায় থেমে চতুর্থ দিন কৃষ্ণনগরে এসে শেষ হবে কায়াক-যাত্রা।

জলঙ্গি নদী।

জলঙ্গি নদী। —ফাইল চিত্র।

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১৫
Share: Save:

কোথাও জল কমে গিয়ে আস্ত নদীখাত পরিণত কৃষিজমিতে। কোথাও নদীবুকে প্রবাহ রুখে তৈরি হয়েছে বাঁশের সাঁকো, বাঁধাল, এমনকি আস্ত সড়ক! ফলে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের ‘জীবনরেখা’ বলে পরিচিত জলঙ্গি নদী আজ ভয়ঙ্কর দূষিত, মৃতপ্রায়। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে এ বার সেই জলঙ্গির জলেই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের আয়োজন করছে আইএমএফ (ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন)। চার দিন ধরে জলঙ্গির বুকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার অংশে কায়াকিং অভিযান চালাবে তারা। মূল লক্ষ্যই হল, জলঙ্গির সংরক্ষণ এবং এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ও জনমত তৈরি।

আইএমএফ এবং নদীপ্রেমী সংগঠন ‘সেভ জলঙ্গি’-র উদ্যোগে আগামী ২২-২৫ অক্টোবর নদিয়ার পলাশিপাড়া থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। পলাশিপাড়া থেকে শুরু হয়ে চাঁদের হাট, বড় আন্দুলিয়ায় থেমে চতুর্থ দিন কৃষ্ণনগরে এসে শেষ হবে কায়াক-যাত্রা। প্রতিদিন প্রায় ১২-১৮ কিলোমিটার নদীপথ অতিক্রম করতে হবে বোটগুলিকে। যোগ দিতে পারবেন উৎসাহী যে কেউ।

আইএমএফের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার চেয়ারম্যান, পর্বতারোহী দেবরাজ দত্ত জানান, প্রতিদিন জলে নামা ১০-১২টি বোটে একজন অনভিজ্ঞের সঙ্গে থাকবেন অভিজ্ঞ কায়াকারও। তাই নিরাপত্তার খাতিরেই প্রতিদিন ১০-১২ জনের বেশি অনভিজ্ঞদের জলে নামানো যাবে না।

পাহাড় ছেড়ে জলে কেন? দেবরাজের জবাব, ‘‘পর্বতারোহীদের সামাজিক দায়িত্বও রয়েছে। দূষণমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আমরাও বদ্ধপরিকর। পাহাড় থেকে যে নদী নেমে আসে, তাকে বাঁচাতেই এই উদ্যোগ। ভাল সাড়াও মিলেছে।’’

পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ জলঙ্গি নদিয়ার স্বরূপগঞ্জে এসে মিশেছে ভাগীরথীতে। নদিয়ার ৯টি ব্লকের উপর দিয়ে বইছে এই নদী। কিন্তু নদীপ্রেমীদের মতে, পদ্মার গতিপথ বদলানোর জেরে জলঙ্গির উৎসমুখ থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার অংশ এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। সেখানে নদী ‘দখল’ করে শুরু হয়েছে চাষাবাদ। নদীখাতের উপরেই তৈরি হয়েছে কৃষ্ণনগর-করিমপুর-জলঙ্গি রাজ্য সড়ক! নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকারের মতে, ‘‘পুরনো ইতিহাসেও জলঙ্গির উৎসমুখে জলের সমস্যার কথা আছে। তবু কলকলি, শিয়ালমারি, ভৈরব, ছোট ভৈরব, পাগলা চণ্ডী, কাজলা, সরস্বতী, ছোট ভাগীরথীর মতো অজস্র ছোট ছোট নদীর জলে বিভিন্ন সময়ে পুষ্ট হত জলঙ্গি। কিন্তু সেই সব মাধ্যমগুলিও আজ কেউ মৃত, কেউ ধুঁকছে। অন্নদামঙ্গল কাব্যে জলঙ্গিকে গঙ্গার সমতুল্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।’’

২০২২ সালে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এ রাজ্যের যে ১৩টি নদীকে দূষিত বলে চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে জলঙ্গিও। অভিযোগ, সরকারি তরফে ‘জলঙ্গি অ্যাকশন প্ল্যান’-এর কোনও পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয় না। ‘সেভ জলঙ্গি’র সেক্রেটারি শঙ্খ শুভ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ‘‘জলঙ্গির মৃত্যু হলে ফল ভুগবেন নদিয়ার প্রায় ২০-২২ লক্ষ মানুষ। তাই জনমানসে সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jalangi River Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE