দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূলকে বোমা মেরে সরাচ্ছে এবিভিপি। (ইনসেটে) জখম বিজেপি সমর্থক। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
কলেজের দখল নিয়ে এবিভিপি এবং টিএমসিপি-র টানাপড়েন চলছিল কিছু দিন ধরেই। সোমবার দুপুরে যথেচ্ছ বোমা পড়ল, চলল গুলিও। কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজ ও তার আশপাশের এলাকা। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখল পুলিশ।
গত লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্র বিজেপির হাতে যাওয়ার পরেই কলেজের দখল নিয়েছিল এবিভিপি। এ দিন আচমকা হামলায় টিএমসিপি তা দখল করে নেয়। কিন্তু ধরে রাখতে পারেনি। এবিভিপি-র পাল্টা হামলায় শেষমেশ তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। ফের কলেজে ঢুকে নিজেদের পতাকা লাগিয়ে দেয় এবিভিপি। এই সংঘর্ষে গুরুতর জখম হয়েছেন প্রদীপ কুণ্ডু নামে এক বিজেপি সমর্থক। তিনি এক ছাত্রের অভিভাবক বলে বিজেপির দাবি। তাঁকে কলকাতায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই মাজদিয়া সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজকে কার্যত বিরোধীশূন্য করে ফেলেছিল টিএমসিপি। অন্য কোনও সংগঠনের অস্তিত্বই ছিল না। অন্য কাউকে কার্যত কলেজে ঢুকতেই দেওয়া হত না বলে অভিযোগ। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এবিভিপি-র ছেলেরা ঢুকে টিএমসিপির ছেলেদের বের করে দিয়ে কলেজ পুরোপুরি দখল করে নেয়। তার পর থেকে টিএমসিপিৃই আর ওই কলেজে ঢুকতে পারছিল না। মাঝে একাধিক বার তারা কলেজে ঢোকার চেষ্টা করলেও এবিভিপির সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি।
তৃণমূলের দিকে লাঠি তাক করে ভয় দেখাচ্ছে এবিভিপি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
কিন্তু এ ভাবে কলেজে হাতছাড়া হওয়াটাও মেনে নিতে পারছিলেন না স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। সম্প্রতি লক্ষ্মণ ঘোষ চৌধুরী আবার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি হওয়ার পরে টিএমসিপি-র ছেলেরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। দলেরই একটি সূত্রের দাবি, লক্ষ্মণের উদ্যোগে মাজদিয়া কলেজ পুনপুদ্ধারের প্রস্তুতি শুরু হয়। সেই মতো এ দিন অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল।
এবিভিপির অভিযোগ, এই স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি সামনে রেখে ভিতরে-ভিতরে কলেজ দখল করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এ দিন সকাল থেকেই তৃণমূলের লোকজন লাঠি, বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কলেজের আশপাশে জমা হতে থাকে। গন্ডগোলের আশঙ্কা থাকায় কলেজের সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়ন করা. হয়। কিন্তু সত্যি করে গোলমাল যখন বাধল, পুলিশ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ।
কলেজের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবিভিপির ব্যানার ছিঁড়ছে তৃণমূল। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
এ দিন মাজদিয়া কলেজে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলছিল। প্রথম পর্বের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই আচমকা টিএমসিপি-র ঝান্ডা নিয়ে শ’দেড়েক ছেলে রে-রে করতে করতে কলেজের গেটে চলে আসে, জোর করে কলেজে ঢুকতে চায়। এবিভিপির অভিযোগ, তারা কলেজ দখল করা পর্যন্ত কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ। তাদের মদতে টিএমসিপি সশস্ত্র ভাবে কলেজে ঢুকে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, ঝান্ডা ও লাঠি নিয়ে টিএমসিপি-র ছেলেরা কলেজের ভিতরে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব শুরু করে। ঝান্ডা থেকে লাঠি খুলে মারধর শুরু করে দেয় তারা। এই আচমকা হামলার ধাক্কা সামলাতে পারেনি এবিভিপি। তারা পিছু হটে কলেজের বাইরে বেরিয়ে যায়। এরই মধ্যে টিএমসিপির ছেলেরা কলেজ চত্বরে এক বিজেপি কর্মীকে ধরে ফেলে। তাঁর মাথায় ইট ও বাঁশ দিয়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। পরে বিজেপির লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। মাথার আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে এবিভিপি ও বিজেপি সমর্থকেরা ফের জড়ো হয় কলেজের বাইরে। তৃণমূলের ছেলেরা কলেজ দখল করে গেটের বাইরে এলে পাল্টা মার দিতে শুরু করে তারা। দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়, গুলিও চলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। কিছু ক্ষণ প্রায় মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ে। বোমা থেকে বাঁচতে পুলিশকেও পালাতে দেখা যায়। শেষে টিএমসিপি পিছু হটে। এর পরেই ফের কলেজে ঢুকে দখল নেয় এবিভিপি।
কলেজের মধ্যে বোমা পড়ছে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, টিএমসিপি কলেজ দখল করতে আসতে পারে ভেবে এবিভিপি আগে থেকে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করে রেখেছিল। সেই কারণেই তারা অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা মার দিতে পেরেছে। এবিভিপি-র জেলা প্রমুখ আশিস বিশ্বাস অবশ্য দাবি করেন, “বোমা-গুলির সংস্কৃতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। টিএমসিপি পড়ুয়াদের সমর্থন হারিয়ে কলেজে হামলা করেছে। সাধারণ পড়ুয়ারাই তা প্রতিহত করেছেন।”
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সৌরিক মুখোপাধ্যায় আবার দাবি করেন, “আমাদের ছেলেরা অধ্যক্ষের কাছে ভদ্র ভাবে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিল। এবিভিপি-র ছেলেরা হামলা করেছে। গুলি-বোমা ছুড়েছে।”
কলেজের অধ্যক্ষ সরোজেন্দ্রনাথ কর বলেন, “দুই সংগঠনের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। আমি বলার পরে পুলিশ কলেজ চত্বরে ঢুকে পরিস্থিতি সামলায়।” কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষ না বলা পর্যন্ত পুলিশ ঢুকতে পারে না। ওঁরা বলার সঙ্গে-সঙ্গে আমরা কলেজে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।”
কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে লাঠি-সোটা নিয়ে এক দল কলেজে ঢুকল কী করে? পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “যত দূর জেনেছি, ওরা কলেজের বর্তমান পড়ুয়া। লাঠি নয়, ঝান্ডা নিয়ে ঢুকেছিল। তবুও আমরা গোটা বিষয়টি তদন্ত
করে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy