বিস্ফোরণের দু’দিন পরে, কল্যাণীর বেআইনি বাজি কারখানা থেকে বিভিন্ন বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধার করল সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড। রবিবার সকালে পাঁচ সদস্যের একটি দল প্রায় দু'ঘণ্টা ওই বাজি কারখানায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। পরে তাঁরা নিশ্চিত করেন, নতুন করে সেখানে আর বিস্ফোরণের সম্ভাবনা নেই।
শুক্রবার দুপুর দেড়টা নাগাদ কল্যাণী পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুল লেনে অবৈধ বাজি তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই চার মহিলার মৃত্যু হয়। তাঁরা সেখানে বাজি তৈরিতে যুক্ত ছিলেন। এক মহিলা আশঙ্কাজক অবস্থায় কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি। বিস্ফোরণের দিনই ওই কারখানার মালিক সাধন বিশ্বাস ওরফে খোকনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে বিস্ফোরণস্থল ঘিরে রাখা হয়েছে। এলাকায় পুলিশি পাহারা রয়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের পাঁচ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বিস্ফোরণস্থলের কাছেই সাধনের বাড়ি। এ দিন বম্ব স্কোয়াডের সদস্যেরা সেই বাড়ির ছাদ থেকে বেশ কিছু নিষিদ্ধ শব্দবাজি উদ্ধার করেন। এ ছাড়াও, বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। সেই সঙ্গে, নতুন করে যাতে বিস্ফোরণ না হয়, তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেজানা যায়।
এলাকার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ঘটনার পরেও ধৃতের বাড়ির ছাদে নিষিদ্ধ শব্দবাজি মজুত ছিল। তা উদ্ধার করতে দু’দিন গড়িয়ে গেল কেন? কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত সাধনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যদিও কারখানার বৈধ কাগজপত্র এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় সাধন তাঁদের জানিয়েছে, বারুদ ও বাজি তৈরির বিভিন্ন পদার্থ ঝাঁট দেওয়ার সময় ঘর্ষণের কারণেই নাকি বিস্ফোরণ ঘটেছে। যদিও এমন ‘যুক্তি’ পুলিশ এখনই মানতে নারাজ। দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের পিছনে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট দায়ী নয়।
অন্য এক সূত্রের দাবি, নিষিদ্ধ শব্দবাজি বা চকলেট বোমাতৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় সলতে বা পাটের সরু দড়ি। ওই দড়ি বাজি তৈরির কারখানাতেই টুকরো টুকরো করে কাটা হত। ঘটনার দিনওই দড়ি কাটার জন্য একটি চাকু ধার দেওয়া হচ্ছিল। সেই সময়ঘর্ষণে সৃষ্টি হওয়া আগুনের ফুলকি বারুদের স্তূপে গিয়ে পড়ায়, বিস্ফোরণ ঘটে যায়। জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ রকম নমুনা সংগ্রহ করেছেন। ওই নমুনার রিপোর্ট এলে বিস্ফোরণের কারণ অনেকটাস্পষ্ট হবে।
রানাঘাট জেলা পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। আগেও বাজি কারখানায় অভিযান চালানো হয়েছে। মানুষকে সচেতনও করা হয়েছিল। বিস্ফোরণের পরে এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)