Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CID

CID: সূত্র বাঁ হাতে গুলি, শার্প শুটারকে ধরল সিআইডি

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজের দোকান কাম অফিসঘরের মধ্যে খুন হন রিপন (ইস্কনে দীক্ষিত হওয়ার নাম হয় রসিকশেখর)।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা, নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ০৫:৪৫
Share: Save:

সূত্র বলতে ছিল শুধু সিসিটিভি ফুটেজ। দেখা গিয়েছিল, এক জন বাঁ হাতে পর পর চারটি গুলি ছুড়ছে। আর সেই সূত্র ধরেই খুনের কিনারা করেছে সিআইডি।

নদিয়ার মায়াপুরে ঘি ব্যবসায়ী রসিকশেখর ওরফে রিপন দাসকে (৩৫) খুনের অভিযোগে সমীর হালদার ও লাল্টু ঘোষ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডি-র দাবি, সমীর এক জন শার্প শুটার। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে তার বাড়ি থেকেই তাকে পাকড়াও করেন গোয়েন্দারা। তাকে জেরা করে রাতে মায়াপুর থেকে লাল্টুকে ধরা হয়। লাল্টুই তাকে খুনের বরাত দিয়েছিল। শুক্রবার নবদ্বীপের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করানো হলে তাদের ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কে লাল্টুকে রিপন খুনের দায়িত্ব দিয়েছিল বা রিপনের সঙ্গে তার যোগাযোগ কী, সে সব খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাতে নিজের দোকান কাম অফিসঘরের মধ্যে খুন হন রিপন (ইস্কনে দীক্ষিত হওয়ার নাম হয় রসিকশেখর)। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘর থেকে চারটি কার্তুজের খোল পায়। পরের দিন তাঁর বাবা, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা রেবতীমোহন দাস পুলিশের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। রিপন সপরিবার মায়াপুরে থাকলেও তাঁর স্ত্রী কয়েক দিন আগে মেয়েকে নিয়ে হাওড়ায় বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন। রিপন একাই ছিলেন। কে, কেন রিপনকে খুন করতে পারে, সে বিষয়ে তাঁর পরিবারের কেউ কিছু জানাতে পারেনি। এর পর বছরখানেক কেটে গেলেও খুনের কিনারা না হওয়ায় পরিবারের আর্জিতে গত ফেব্রুয়ারি নাগাদ সিআইডি তদন্তভার নেয়। তার চার মাসের মধ্যে ধরা পড়ল দুই দুষ্কৃতী।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, সে দিন সন্ধ্যা ৬.৫০থেকে ৬.৫৪ মিনিটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। রিপন অফিসে একাই বসেছিলেন। সম্ভবত ক্রেতা সেজে এক জন তাঁর সামনে এসে কথাবার্তা বলতে থাকে। সেই ফাঁকে আরও এক জন তার পিছনে এসে দাঁড়ায় এবং মুহূর্তের মধ্যে বন্দুক বের করে বাঁ হাতে রিপনের বুক লক্ষ্য করে পর পর চার বার গুলি চালায়। বেরিয়ে যাওয়ার আগে ঘরের চারদিকে এক বার তাকিয়েছিল লোকটি। তাতেই সিসি ক্যামেরায় তার মাস্ক ঢাকা মুখের উপরের দিকে ছবি ধরা পড়ে। তদন্তকারীদের দাবী, সেই ছবিই পরবর্তী কালে তাদের অপরাধী শনাক্ত করতে অন্যকম প্রধান সহায় হয়।

সিআইডি-র এক কর্তা জানান, ঘটনার তদন্তভার নিয়ে তাঁদের প্রথম কাজ ছিল, কোন দুষ্কৃতী বাঁ হাতে গুলি চালাতে ওস্তাদ তা খুঁজে বার করা। সোর্সদের সঙ্গে কথা বলে একটি তালিকা বানিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। তাতে জানা যায়, এদের কয়েক জন এলাকায় থাকছে না। সেই সঙ্গে খুনের দিন ওই এলাকার ‘টাওয়ার ডাম্পিং’ মিলিয়ে বেশ কয়েক জনকে শনাক্ত করা হয়। নির্দিষ্ট করে সমীরকে চিহ্নিত করতে আরও সহায় হয় সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া তার মুখের উপরের অংশের ছবি।

ইতিমধ্যে পুলিশ খোঁজ করছে জানতে পেরে অভিযুক্তেরা মোবাইল বন্ধ করে দেয় এবং নম্বর পাল্টে ফেলে। এক তদন্তকারী জানান, সমীর প্রথমে বাইরে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে নদিয়ার ধুবুলিয়া থানা এলাকার বেলপুকুরে এসে লুকিয়ে ছিল। কিছু দিন আগে সে পূর্বস্থলী ফেরে। সোর্সের মাধ্যমে সেই খবর পেয়েই তাকে পাকড়াও করার হয়। তদন্তে নেমে লাল্টুকে আগেও কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিআইডি অফিসারেরা। প্রথমে মায়াপুর থানা এবং পরে ভবানী ভবনে ডাকা হয় তাকে। গত ৭ জুন তাকে শেষ বার ভবানী ভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বৃহস্পতিবার একটু বেশি রাতে একটি ছবি শনাক্ত করার অছিলায় তাকে ফের থানায় ডাকা হয়। প্রথমে ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত সে আসতে রাজি হয়। মায়াপুর পোস্ট অফিস মোড়ে আসতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। সিআই়ডি-র দাবি, দু’জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই খুনের কার্যকারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

CID shooter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy