Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

পাহাড় থেকে আসেনি বাস, আঁচ পড়েনি ধাবার উনুনে

কৃষ্ণনগরের কোল ঘেঁষা, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে, সার দেওয়া হোটেলগুলো রাত-জাগা। উত্তরবঙ্গ থেকে হু হু করে নেমে আসা বাস আর তাদের ঝাঁপিয়ে পড়া যাত্রীদের নিয়ে আস্ত রাতগুলো দিব্যি জেগে থাকে যে মিষ্টি-নোনতা আর পাইস হোটেলগুলো— বৃহস্পতিবার তারা সেই ব্যস্ত চেহারাটাই হারিয়ে এক্কেবারে অচেনা।

জনশূন্য: কৃষ্ণনগরের একটি ধাবা। —নিজস্ব চিত্র

জনশূন্য: কৃষ্ণনগরের একটি ধাবা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সবাদদাতা
কৃষ্ণনগর ও ফরাক্কা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

আলোটা কোণাকুনি এসে পড়েছে রাস্তায়। দোকানের সামনে ছড়ানো চাতালে সন্ধ্যে থেকে ঠায় দাড়ানো দু’টো রিকশায় দ-হয়ে ঘুমোচ্ছে দুই চালক। বাকিটা নিভু নিভু একটা অচেনা রাত।

কৃষ্ণনগরের কোল ঘেঁষা, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে, সার দেওয়া হোটেলগুলো রাত-জাগা। উত্তরবঙ্গ থেকে হু হু করে নেমে আসা বাস আর তাদের ঝাঁপিয়ে পড়া যাত্রীদের নিয়ে আস্ত রাতগুলো দিব্যি জেগে থাকে যে মিষ্টি-নোনতা আর পাইস হোটেলগুলো— বৃহস্পতিবার তারা সেই ব্যস্ত চেহারাটাই হারিয়ে এক্কেবারে অচেনা।

দার্জিলিঙের পাহাড় আগ্নেয়গিরি হয়ে ওঠায় শিলিগুড়ি থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে সরকারি-বেসরকারি যে বাসগুলো নেমে আসে, বৃহস্পতিবার তারা আসেনি। কলকাতা থেকে পাহাড় দেখাতে নিয়ে যায় যে সারবদ্ধ বাস, যাত্রী তাতেও হাতে গোনা। রাতটা তাই মশা তাড়িয়েই কেটে গিয়েছে কৃষ্ণনগরের হোটেলগুলোর।

আরও খানিক এগিয়ে, ফরাক্কার লম্বাটে লাইন হোটেলের চেহারাটা আরও করুণ। হোটেল মালিক জীবন ঘোষ ধরা গলায় বলছেন, “কী বলব বলুন তো, মরসুমভর গড়ে ত্রিশ খানা পর্যটক বোঝাই বাস আসে। এ রাতে একটাও নেই।’’ ধক করে উঠছে তাঁর ‘বুক’, বলছেন, ‘‘দিন তিনেক চললে ব্যবসাটাই লাটে উঠবে জানেন!’’ পাহাড় তেতে উঠতেই বুধবার থেকে তার আঁচ ছড়িয়েছে সমতলে। আর নিভে গিয়েছে জাতীয় সড়কের ধারে রাত-জাগা হোটেলের উনুন।

কৃষ্ণনগরের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে পুরনো হোটেলের মালিক নেপাল ঘোষ বলছেন, “আমাদের হোটেলে দিনে পাঁচটি করে বাস দাঁড়ায়। গড়ে জনা পঞ্চাশ যাত্রী আসেন। বৃহস্পতিবার একটা বাসও আসেনি। চলবে কী করে বলুন তো?’’ ফরাক্কার একটি ভাতের হোটলের মালিকের গলাতেও দুরুদুরু সুর— ‘‘কী বলব বলুন তো মশাই, শ’খানেক লোকের ব্যবস্থা করা আছে, একটা বাসও এল না, কী লস!’’ মনে পড়িয়ে দিচ্ছেন, দিন কয়েক টানা এমন চললে বাস্তবিকই ব্যবসা চালান মুস্কিল হবে।

ত্রিশ বছর আগে ফিরে যাচ্ছেন তিনি, ‘‘আশির দশকে পাহাড় যখন তেতে উঠল তখন দিনের পর দিন এই অবস্থা। দোকান বন্ধ করে অর্ডার সাপ্লায়ারের ব্যবসা শুরু করেছিলাম। জানি না এ বার কী হবে!’’

ফরাক্কা আর কৃষ্ণনগরের সেই রাতের হোটেলগুলো থেকে মরিয়া ফোন ছুটছে কখনও কলকাতা, কখনও বা শিলিগুড়ি, ‘‘কী, বাস ছাড়বে তো, প্যাসেঞ্জার কত জন গো!’’ উত্তর যে তেমন আশা জোগাচ্ছে না, বোঝা যাচ্ছে তাঁদের ব্যাজর মুখ দেখে। রাস্তা থেকেই হাঁক পেড়ে ছুটে যাচ্ছে নির্দেশ— এই তরকার ডেকচিটা নামিয়ে দে তো, অত প্যাসেঞ্জার নেই।’’ তার পর নিজের মনেই বিড়ি বিড় করছেন, ‘‘কে লাগায় আগুন আর কে পোড়ে!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy