মরিয়া হয়ে। শুক্রবার কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র
আচমকা বাস বন্ধের জেরে দিনভর ভোগান্তি সইল নদিয়া। শেষে প্রশাসন অটো ও টোটোর দৌরাত্ম্যের বিহিত করার আশ্বাস দেওয়ায় শুক্রবার বিকাল থেকে কৃষ্মনগর-করিমপুর রুটে বাস চলাচল শুরু হয়। আজ, শনিবার সকাল থেকে জেলার সমস্ত রুটেই স্বাভাবিক ভাবে বাস চলার কথা।
ট্রেনে কলকাতা থেকে ফিরছিলেন তেহট্টের সুশান্ত মণ্ডল। সঙ্গে বৃদ্ধা মা। কৃষ্ণনগরে নেমে শোনেন বাস বন্ধ। করিমপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে মানুষ আর টোটোর ভিড়ে ঘন্টাখানেক ঠায় দাঁড়িয়ে, টিপটিপ করে বৃষ্টিও পড়ছে।
হুড়মুড় করে একটা দুধের গাড়ি এসে থামতেই জনা চারেক তাতে উঠে পড়ে। ভাড়া মাথা পিছু দেড়শো টাকা। দরদাম করার ফুরসত নেই। কিছুক্ষণ পর একটা ফাঁকা গাড়ি এসে দাঁড়াতেই মাকে ঠেলে তুলে দিয়ে নিজে উঠে বসেন সুশান্ত। জানলা দিয়ে বলেন, “ভাড়া যা নেয়, নেবে। আগে তো মাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাই!”
নদিয়া জুড়ে বাস বন্ধ থাকায় শুক্রবার দিনভর এমনই ছবি দেখা গিয়েছে। কয়েক গুণ বেশি ভাড়া নিয়ে টোটো ২০-২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যাত্রী ফেরি করেছে। যাঁদের বেশি টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই তাঁরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছেন। বাস বন্ধ থাকায় স্ট্যান্ডের কাছে-পিঠে তেমন দোকানপাটও খোলা ছিল না। ফলে জল আর খাবারের সমস্যাও হয়েছে।
মঙ্গলবার ধুবুলিয়ায় টোটোর সঙ্গে বিবাদে বাসকর্মীদের বিবাদের জেরে কৃষ্মনগর-বহরমপুর রুটে যে বাস বন্ধ হয়েছিল, তারই জেরে শুক্রবার কার্যত বিনা নোটিসে বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ করে দেন বাসকর্মীরা। জন্মাষ্টমীর দিন স্কুল-কলেজ বা বহু কর্মস্থলে ছুটি থাকায় যাত্রী কম ছিল। তবে যাঁদের বেরোতেই হয়েছে, তাঁরা হয়রান হন।
তারাপুর যাবেন বলে রানাঘাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বছর পঞ্চাশের রুমা বিশ্বাস জানতে পারেন, বাস চলছে না। পরে টোটো ধরে হবিবপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সেখান থেকে কোনও ভাবে তারাপুর যাবেন। রথতলা স্ট্যান্ড থেকে দত্তপুলিয়া হয়ে কৃষ্ণনগরের একটি বাসও চলেনি। শান্তিপুর হয়ে কালনা ঘাট, হবিবপুর হয়ে বলাগড় ঘাট, বীরনগর ও তাহেরপুর হয়ে কৃষ্ণনগর — সব বাসই বন্ধ ছিল। হরিণঘাটার জাগুলি থেকে কল্যাণী হয়ে কাঁচরাপাড়া যাওয়ার বাস সকালে কয়েকটি চলেছিল। করিমপুর থেকে কৃষ্ণনগরের বাসও কয়েকটি চলে। পরে বন্ধ হয়ে যায়। তবে আসানসোল, রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর, বরাকর, শিলিগুড়ি যাওয়ার দূরপাল্লার বাস স্বাভাবিক ভাবেই চলাচল করেছে।
বৃহস্পতিবার বৈঠক হলেও তা ব্যর্থ হয়। মালিকেরা বাস চালাতে রাজি থাকলেও কর্মীরা বেঁকে বসেন। জট খুলতে কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে বাস মালিক সমিতির ঘরে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের সদস্য ও পুলিশ কর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। বাসকর্মীরা জানান, জেলার বিভিন্ন রুটে টোটো ও অটো চালকদের হাতে তাঁরা বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবাদে বাস বন্ধ করলেও প্রশাসনের আশ্বাসে ফের বাস চালিয়েছেন। এমনটা আর চলবে না। বাসকর্মীদের দাবি, বেআইনি ভাবে টোটো ও অটো চলাচল করতে দেওয়া চলবে না।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অঞ্চলিক পরিবহণ দফতর বা আরটিও বোর্ডের সদস্য তারান্নুম সুলতানা। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “বেআইনি অটো- টোটো চলাচল বন্ধ করতে যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে। এ বার থেকে আমি নিজে দেখতে বেরোব।” নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি কুণাল ঘোষ বলেন, “বাসকর্মীদের নিরাপত্তা দিক প্রশাসন, যাতে তাঁরা নির্ভয়ে ও বাধাহীন ভাবে বাস চালাতে পারেন। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের যাতে সমস্যা না হয় সেটাও দেখতে হবে।” আর বাসকর্মীদের তরফে রাজু বৈরাগ্য বলেন, “তারান্নুম সুলতানা নিজে দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা তাঁর কথা রাখলাম। এ বার দেখার, তিনি কতটা কথা রাখেন। এই মাসটা দেখে নিই। ওঁরা কথা না রাখলে আমরা ফের দাবি আদায়ের ভাবনাচিন্তা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy