সীমান্তে বেড়া নিয়ে শ’খানেক জায়গায় বাংলাদেশের সঙ্গে বিতর্ক আছে ভারতের। এর মধ্যে নদিয়াতেও রয়েছে বেশ কয়েকটি। জমি জটিলতার কারণে জেলার সীমান্তে বেশ কিছু জায়গায় কাঁটাতার বসানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অস্থিরতার জেরে আরও কড়া নজরদারির প্রয়োজন পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএসএফের তরফে জমির জন্য তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে। জমি কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মাস দুয়েক আগে জমি কিনে হস্তান্তরের সময়সীমা ধার্য হলেও তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব না হওয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে কোথাও আদালতে মামলা করা হয়েছে, আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে জমির প্রকৃত মালিকানা নিয়ে বিতর্ক আছে। এমনই একাধিক কারণে বছরের পর বছর ধরে ওই সমস্ত এলাকায় জমি কেনা সম্ভব হয়নি বলে জেলা প্রশাসনের দাবি।
তবে বর্তমানে আবার জমি কেনার জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি হাঁসখালি ব্লকের তিনটি মৌজায় প্রায় আড়াইশো জমি-মালিককে নোটিস পাঠানো হয়। জেলা প্রাশাসনের কর্তাদের দাবি, হাঁসখালিতে ফাঁকা জায়গায় জমি কেনা নিয়ে প্রথম থেকেই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সমীক্ষায় জমি চিহ্নিত করা হলেও পরে কয়েকটি ক্ষেত্রে বিএসএফের তরফে নতুন করে যৌথ সমীক্ষার কথা বলা হয়। যে কারণে অন্যান্য ব্লকে কমবেশি জমি কেনা সম্ভব হলেও হাঁসখালি ব্লকে একেবারেই জমি কেনা যায়নি। দ্বিতীয় বার সমীক্ষার পর নতুন করে জমি কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তার জন্য় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে অর্থ বরাদ্দ হয়। সম্প্রতি জমির মালিকদের নোটিসও দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, হাঁসখালির শিলবেড়িয়া, উলাশি ও রামনগর মৌজার ৪.১০৭ কিলোমিটার ফাঁকা সীমান্তের জন্য ৩৩.৮৯ একর জমি কেনার প্রক্রিয়া খুব তাড়াতাড়ি পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে।
অন্য ব্লকগুলিতে আগে থেকে জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও নানা জটিলতায় তা গতি পাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক জায়গায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণ নিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতাই প্রধান বাধা। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, অনেকের জমির নথিপত্র ঠিক নেই, কোনও কোনও ক্ষেত্রে জমির দলিল থাকলেও পরচা নথিভুক্ত করা নেই। কোনও মালিক উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পেয়েছেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা নেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে সমীক্ষার পরে জমির মালিকানা হস্তান্তর হয়েছে। কারও আবার জমির নথি দুই পুরুষ আগে তৈরি, এখন শরিকি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে জমির প্রকৃত মালিককে শনাক্ত করাই জটিল হয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার মতে, “সীমান্ত এলাকার বেশির ভাগ মানুষই জমির কাগজপত্র ঠিকঠাক করে রাখেন না। ফলে জমি কিনতে গেলে আইনি জটিলতা তৈরি হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তবে বিগত তিন-চার বছরে বেশির ভাগ জমি কেনা হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। নদিয়া জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ বলেন, “সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত জমি কেনা হবে। বিএসএফকে জমি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)