সিবিআই রানাঘাট পুরসভায় হানা। অতন্ত্র প্রহরায় সিআরপিএফ জওয়ান। সোমবার । ছবি সুদেব দাস
তদন্তের বিষয় এক। রাজনৈতিক দল আলাদা। অথচ সোমবার বিকালে সিবিআই রানাঘাট ছাড়ার পরেই তৃণমূল পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় কার্যত একই সুরে দাবি করলেন, রানাঘাট পুরসভায় নিয়োগে কোনও আর্থিক লেনদেন বা দুর্নীতি হয়নি।
সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ পার্থসারথীর বাড়ি ও রানাঘাট পুরসভায় হানা দেন সিবিআই অফিসারেরা। প্রায় সাত ঘণ্টা তাঁরা পুরসভার বিভিন্ন দফতরের নথিপত্র খতিয়ে দেখেন। যদিও পুরসভা সূত্রের দাবি, কোনও নথিপত্রই তদন্তকারী আধিকারিকেরা নিয়ে যাননি। তবে সিবিআই হানায় এ দিন পুরসভার স্বাভাবিক কাজকর্ম কার্যত শিকেয় ওঠে।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই কৃষ্ণনগর ও শান্তিপুর পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার তদন্তে আসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেই সময়ে রানাঘাট পুরসভায় তারা হানা দেয়নি। ফলে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল, তৎকালীন তৃণমূল পুরপ্রধান পার্থসারথী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণেই কি ছাড় দেওয়া হচ্ছে রানাঘাটকে? সেই প্রশ্নের আপাতত অবসান হল।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৪ সালে ৬১ জন, ২০১৬ সালে ৩৪ জন ও ২০১৮ সালে ৬৬ জন কর্মী নিয়োগ হয়েছে রানাঘাট পুরসভায়। এই নিয়োগে অয়ন শীলের সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ দুই দফায় নিয়োগে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই আগে থেকে পুরসভার অস্থায়ী কর্মী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছিলেন।
রানাঘাটের বর্তমান পুরপ্রধান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সিবিআই অফিসারেরা আমায় কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। সৌজন্য বিনিময় শুধু হয়েছে। তা ছাড়া অয়ন শীলকে আমি চিনি না। তাঁর সংস্থার হাত ধরে নিয়োগ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তখন আমি পুরপ্রধান ছিলাম না।" পুরপ্রধান না হলেও শেষ দুই নিয়োগের সময়ে প্রভাবশালী পুরপ্রতিনিধি ছিলেন কোশলদেব, তৎকালীন পুরপ্রধান পার্থসারথীর ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত ছিলেন। তবে তাঁর দাবি, "রানাঘাট পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও আর্থিক লেনদেন হয়নি।"
আবার সিবিআই বাড়ি ছাড়তেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বিজেপির রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী দাবি করেন, "পুরসভায় নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি। সেই বিষয়ে আমাকে কোনও প্রশ্নও করা হয়নি। পুরসভার নথিপত্র আমি বাড়িতে এনে রাখিনি। সুতরাং তেমন কোনও নথি আমার বাড়িতে পাওয়া যাবে না, এটাই স্বাভাবিক।"
সিপিএমের রানাঘাট এরিয়া কমিটির সম্পাদক কমল ঘোষের দাবি, "এই একটা ঘটনাতেই প্রমাণ হয়ে গেল যে দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ফারাক নেই। যে সময় ওই নিয়োগ হয়, তখন পার্থসারথী ও কোশলদেব একই দলে ছিলেন। এখন যিনি পুরপ্রধান, তিনি তখন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলেন।"
২০১৯ সালে রানাঘাট পুরসভায় নিয়োগের সময় চাকরিপ্রার্থী ছিলেন হাঁসখালির অমিত বণিক। এ দিন সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে বিভিন্ন নথিপত্র নিয়ে তিনি পুরসভার সামনে হাজির হন। তাঁর অভিযোগ, "আমি সেই সময়ে চাকরির লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম। পরে আর ইন্টারভিউতে আমাদের ডাকা হয়নি। কেন ডাকা হয়নি, কেন মেধাতালিকা প্রকাশ হয়নি ইত্যাদি জানতে তথ্য জানার অধিকার আইনে পুরসভাকে চিঠি দিয়েছিলাম। তার উত্তর দিতে পারেনি পুরসভা।" কেন সেই উত্তর দেওয়া যায়নি, তার ব্যাখ্যা অবশ্য এ দিনও মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy