অশোক চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইস্তফাপত্র পাঠালেন বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অশোক চক্রবর্তী। বিধানসভা ভোটের আগেও এক বার ইস্তফা দিতে চেয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। সে বার পিছিয়ে আসেন। সোমবার তিনি রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। তবে বিজেপি ছেড়ে অন্য কোনও দলে যোগ দিচ্ছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচনে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সব আসনেই জিতেছে বিজেপি। কিন্তু অসন্তোষ বা অভিমান তৈরি হচ্ছিল আগে থেকেই। ভোটের আগে দলের প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ যখন চরমে, সেই সময়ে দলের দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায় একাধিক পদাধিকারী ইস্তফাপত্র জমা দেন। তার মধ্যে অশোকও ছিলেন। সেই চিঠিতে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়কে রানাঘাট উত্তর পশ্চিম কেন্দ্রে প্রার্থী করা নিয়ে আপত্তির কথা জানানোর পাশাপাশি তাঁরা দলকে ‘তৃণমূলীকরণ’ থেকে রক্ষা করার কথাও তুলেছিলেন।
এ বারে কেন ইস্তফা? অশোক বলেন, “দলের বহর বেড়েছে। এক জন সাংসদ, পাঁচ জন বিধায়ক (সাংসদ জগন্নাথ সরকার শান্তিপুর কেন্দ্রে জিতেও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন), পঞ্চায়েত স্তরেও একাধিক জনপ্রতিনিধি আছেন। এঁদের এক সূত্রে রেখে দলকে পরিচালনা করার জন্য ভাল নেতৃত্বের প্রয়োজন। সেই জন্যই দায়িত্ব ছাড়লাম।”
তাহেরপুর নেতাজি হাইস্কুলের ইংরাজির শিক্ষক তথা স্থানীয় বাসিন্দা অশোকের বিজেপির হয়ে পথচলা শুরু ১৯৯৫ সালে। দলের নিচুতলা থেকে শুরু করে এক সময়ে একাধিক দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এক সময়ে দলের বুথ সভাপতি, তাহেরপুর শহর মণ্ডল সভাপতির দায়িত্ব যেমন পালন করেছেন, আবার ২০১৭ সালে দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০১৮ সালে দলের ওই সাংগঠনিক জেলার সাধারন সম্পাদক হন। পরের বছর জগন্নাথ সরকার সাংসদ হলে তাঁর জায়গায় সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হন জগন্নাথ-বিরোধী বলে পরিচিত মানবেন্দ্রনাথ রায়। অশোক সেই সময়ে জগন্নাথের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেই সময়ে অশোককে আনা হয় তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ জেলার সহ-সভাপতি পদে। তবে ওই বছরেই ডিসেম্বরে মানবেন্দ্রকে সরিয়ে জেলা সভাপতি করা হয় অশোককে। ফলে ক্ষমতার রাশ ফের জগন্নাথের গোষ্ঠীর হাতেই ফিরে আসে।
বিজেপি সূত্রের খবর, এর মাস কয়েক পর থেকেই জগন্নাথের সঙ্গে অশোকের দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। এক সময়ে জগন্নাথের সঙ্গে দলের সংগঠন নিয়ে লড়াই ছিল মানবেন্দ্রনাথ বা দিব্যেন্দু ভৌমিকদের। কল্যাণীর বাসিন্দা মানবেন্দ্রনাথ বর্তমানে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বাসিন্দা। আর দীর্ঘদিন ধরেই দলের সংগঠনে কার্যত নিষ্ক্রিয় দিব্যেন্দু। এই পরিস্থিতিতে একদা ঘনিষ্ঠ অশোক এবং জগন্নাথের মধ্যেই চাপা লড়াই শুরু হয়। শেষ বার দলের জেলা কমিটিতে যে সাংগঠনিক রদবদল হয় সেখানেও ডানা ছাঁটা হয় জগন্নাথ ঘনিষ্ঠদের।
বিজেপির নদিয়া জেলা সংগঠন দু’ভাগে ভাগ হওয়ার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণের সভাপতি ছিলেন জগন্নাথই। তার উপরে গত দু’বছর ধরে তিনি সাংসদ। সেই সুবাদে দলের নিচুতলাতেও তাঁর ভাল প্রভাব আছে। সেখানেও নিজের সংগঠন সাজানোর চেষ্টায় ছিলেন অশোক। তবে সম্প্রতি দলের মধ্যেই তাঁকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছিল বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের একাংশের দাবি। আবার দলেরই একাংশের দাবি, অশোককে সরিয়ে দেওয়ার জন্যও সক্রিয় ছিল কোনও কোনও মহল। এর মধ্যে তিনি নিজেই সরে গেলেন।
গত শনিবার কৃষ্ণনগরে আসেন বিধানসভায় বিজেপির প্রধান মুখ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের দফতরে যান তিনি, দলের দফতরে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকও করেন। সেখানে দলের বিধায়কেরাও ছিলেন। ঘটনাচক্রে এদের মধ্যে পাঁচ বিধায়কই নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার। অশোক ঘনিষ্ঠদের দাবি, জেলায় দলের বিধায়কদের ডাকা হলেও ডাকা হয়নি নদিয়া দক্ষিণের সভাপতিকে। তবে দলেরই একাংশের দাবি, ওই কর্মসূচী ছিল নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বকে নিয়ে। আর বিরোধী দলনেতা এসেছেন বলে বিধায়কেরা উপস্থিত ছিলেন। অশোকের ইস্তফা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, “বিষয়টা আমার জানা নেই।”
রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি তথা দলের নবদ্বীপ জ়োনের কনভেনর বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী বলেন, “একটু মান-অভিমান হয়েছে। আমি কথা বলছি, দলের অন্যেরাও ওঁর সঙ্গে কথা বলছেন। সব মিটে যাবে। উনি জেলা সভাপতি পদে কাজ চালিয়ে যাবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy