—ফাইল চিত্র।
উন্নয়ন নাকি হিন্দুত্ব?
সকলের ভালর জন্য রাজনীতি, নাকি বাইরে উদারতার চামড়া পরা সাম্প্রদায়িকতার বিষ?
অগ্নিপরীক্ষা কাল, সোমবার।
শনিবারের দুপুরে শেষ বাজারে যখন ঝড় তুলছেন বাবুল সুপ্রিয়, সেই হল্লার মধ্যেই বিজেপির এক জেলা নেতা বলছেন, “এ বার কিন্তু মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ আমরা পাব। দেখে নেবেন।” কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস।
হয়তো সত্যি নয়।
কিন্তু করিমপুরের মাঠঘাট বলছে, চড়া মাত্রার সাম্প্রদায়িক আবেগ উড়ে বেড়াচ্ছে গোটা তল্লাট জুড়ে। মুসলিম ভোট না হলেও অন্য দলের ঘর ভেঙে বেশ কিছুটা হিন্দু ভোট ছিনিয়ে নেবেই বিজেপি। তৃণমূলকে বাঁচাতে পারে তার মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক। বাম-কংগ্রেস জোট হোক বা বিজেপি, তাতে থাবা বসালে বিপদ!
গত লোকসভা ভোটে করিমপুর বিধানসভা এলাকার যে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূল বড় লিড পেয়েছিল, তার বেশির ভাগেই মুসলিমদের বাস। তবে তৃণমূলের যে অংশটি প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেছিল, বিজেপি তাদের দলে টেনেছে। এঁদের অন্যতম নতিডাঙা ১ পঞ্চায়েতের পণ্ডিতপুরের বাসিন্দা, প্রাক্তন করিমপুর ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি আফাজউদ্দিন। বিজেপির দাবি, এঁদের হাত ধরেই তৃণমূলের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাবে তারা।
কিন্তু এই দাবি বাস্তবে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। তার কারণ বিজেপিরই চারিয়ে দেওয়া ধর্মীয় মেরুকরণ। সে ক্ষেত্রে, মুসলিম ভোট ঠিক কতটা বিজেপির দিকে ঝুঁকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন থাকছেই। গত লোকসভা ভোটের ফলও বলছে, করিমপুরে মুসলিম-প্রধান এলাকায় ব্যাপক লিড পেয়েছে তৃণমূল। জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “গত লোকসভা ভোটও কিন্তু পুরোপুরি ধর্মীয় মেরুকরণের ভোট হয়েছিল। সেই ধারাই অক্ষুণ্ণ থাকবে।”
লোকসভা ভোটে করিমপুর ১ ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ছ’টিতে লিড পায় বিজেপি। হরেকৃষ্ণপুর ও পিপুলবেড়িয়ায় কেবল তৃণমূল এগিয়ে ছিল। কিন্তু তাতেও বিজেপির লিড দশ হাজার টপকায়নি। উল্টো দিকে, করিমপুর ২ ব্লকের ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একটিতেও লিড পায়নি বিজেপি। তবে ১ নম্বর ব্লকের মধুগড়ি এবং ২ নম্বর ব্লকের মুরুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে টক্কর প্রায় সমানে-সমানে। তৃণমূল সবচেয়ে বেশি লিড পেয়েছিল ধোড়াদহ ১ ও ২ এবং নতিডাঙা ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে, যে এলাকায় প্রায় ৯০ শতাংশ ভোটারই মুসলিম।
কিন্তু সত্যি যদি মেরুকরণের ভোট হয়, ঘুরপথে বিজেপির লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সে ক্ষেত্রে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় আগের চেয়ে বেশি ভোট টেনে নিতে পারেন বাম-কংগ্রেস জোটের মুসলিম প্রার্থী গোলাম রাব্বি। তাতে তৃণমূলের বড় ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু মাত্র ৮ শতাংশে নেমে আসা সিপিএম আদৌ তেমন দাঁত ফোটাতে পারবে কি না, সন্দেহ রয়েছে দলেই। আবার ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ১৬ শতাংশ ভোট পাওয়া কংগ্রেসও পাঁচ বছর পরে প্রায় ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। ভোটারেরা তাদের উপরে আস্থা রাখবেন, এমন আশাও কম।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রায় ৪৫ শতাংশ ভোটের তুলনায় গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কমেছে মাত্র তিন শতাংশ। সেই অঙ্কই তুলে ধরে বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, সেই ধারা এ বারও অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিন্তু সাধারণত লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে এবং বিধানসভা ভোটে রাজ্যে ক্ষমতাসীনেরা বাড়তি আনুকূল্য পায়, সেই হিসেবও মাথায় রাখা জরুরি।
করিমপুর বিধানসভা এলাকায় মোট ভোটারের প্রায় ৪২ শতাংশ মুসলিম, ৫৮ শতাংশ হিন্দু। তৃণমূলের দাবি, করিমপুরের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষের মধ্যে এনআরসি-র মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তার ফলে মুসলিমরা যেমন বিজেপিকে হারাতে এককাট্টা হয়েছেন, হিন্দুদেরও একটা বড় অংশ আতঙ্কিত। তারা বিজেপি থেকে দূরে সরেছেন। তাঁরাই জিতিয়ে দেবেন তৃণমূলকে।
ম্যাজিক বাক্স খোলার চাবিটা কি আসলে হীনবল সিপিএমের হাসিমুখ গোলাম রাব্বির পকেটে?
হয়তো তা-ই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy