হারিয়ে যেতে বসেছে এই ছবি। — ফাইল চিত্র।
পাঁচ তরকারি, বেগুন, আলু, ফুল কপি, বাঁধা কপি, মাছের ঝোলের মতো তরকারিতে কয়েকটি বড়ি দিলেই সেই সব তরকারির স্বাদ বদলে যায়। তাই তো খাদ্য রসিক বাঙালির বিশেষত শীতে প্রিয় খাবার হল কলাই ও সাদা চাল কুমড়োর বড়ি। এখন গাঁটের টাকা খরচ করলেই বাজার থেকে মিলছে কলাইয়ের বড়িও।
হারিয়ে যেতে বসা বাড়ির এই বড়ি এখনও কেউ কেউ বাড়িতে তৈরি করেন। বাসিন্দারা বলছেন, নিপুণ হাতে যে আন্তরিকতা দিয়ে বাড়ির মহিলারা বড়ি তৈরি করেন সেই আন্তরিকতা বাজারি বড়ি তৈরির সময় থাকে না। এ ছাড়া বাজারি বড়িতে ডাল ও কুমড়োর পরিমাণ কম থাকে। অনেক সময় বাজারি বড়িতে ভেজাল থাকে। যার জেরে বাড়ির বড়ির মতো বাজারি বড়ির স্বাদ হয় না।
কেমন ভাবে বাড়িতে বড়ি দেওয়া হয়? প্রবীণারা জানাচ্ছেন, আগে থেকেই বড়ির জন্যে সাদা চাল কুমড়ো বাছাই করে বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়। আর শীতকাল এলেই নতুন কলাই বাছাই করা হয় বড়ি দেওয়ার জন্য। আর বড়ি দেওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় কলাইয়ের খোসা ছাড়িয়ে জলে ভিজিয়ে দেওয়া হয়, তেমনই কুমড়ো কুড়ে জল ঝরাতে দেওয়া হয়। রাতভর কলাই ভেজানো থাকার ফলে ফুলেফেঁপে ওঠে। ভোরবেলায় বাড়ির মহিলার উঠে ভেজানো কলাই ও সাদা চাল কুমড়ো বেঁটে নেন। তার পরে ছোট ছোট বড়ির আকারে কোনও পাত্রে দিয়ে রোদে শুকাতে দেন। লালগোলার ফেরদৌসী বিবি বলেন, ‘‘বছর পনেরো আগেও শীতকালে গ্রামীণ এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এ ভাবেই বাড়ির মহিলারা কলাইয়ের বড়ি দিতেন। একটি বাড়িতে পাড়ার মহিলারা জড়ো হয়ে সেই বড়ি দিতেন। কিন্তু এখন বাজারে মিলছে নানা ধরনের বড়ি। যার জেরে ধীরে ধীরে বাড়িতে বড়ি দেওয়ার সেই রীতি উঠে যেতে বসেছে।’’
ইসলামপুরের রেহেনা বিবি বলছেন, ‘‘বড়ি দিতে প্রচুর খাটুনি হয়। রাতে কলাই ভিজিয়ে রাখতে হয়। তার পরে ভোরে উঠতে কুমড়ো কোরা থেকে শুরু করে ভেজানো কলাই ও কুমড়ো বাটতে হয়। তার পরে সেগুলি বড়ি আকারে দিয়ে শুকোতে দিতে হয়। বড়ি কুয়াশা সহ্য করতে পারে না। তাই কুয়াশার হাত থেকে বড়িতে কাপড় ঢাকা দিতে হয়। এত খাটুনির দিকে না গিয়ে অনেকেই বাজার থেকে বড়ি কিনে নিচ্ছেন।’’
বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও বড়ি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন।বড়ির অন্যতম উপকরণ হল কলাই। এবারে বর্ষায় বৃষ্টির ঘাটতির জন্য কলাই চাষ ভাল হয়েছে মুর্শিদাবাদে। এবারে বর্ষাকালে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। যার জেরে বহু জমিতে কৃষকেরা ধান লাগাতে পারেননি। আর ওই সব পড়ে থাকা বেশ কিছু জমিতে এ বারে কলাই চাষ হয়েছিল। যার জেরে এ বছর কলাযই চাষের এলাকা বৃদ্ধি হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় প্রায় ১০ হাজারে হেক্টর জমিতে কলাই চাষ হয়েছিল। তাতে বিঘা প্রতি দেড় থেকে দুই কুইন্টাল হারে কলাই উৎপাদন হয়েছে বলে জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।মুর্শিদাবাদের উপক কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মোহনলাল কুমার বলেন, ‘‘এ বারে বৃষ্টির ঘাটতির কারণে ধান চাষ কম হয়েছে তবে কলাই চাষের পরিমাণ বেড়েছিল। এ বারে কলাই চাষের উৎপাদন ভাল হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy