Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Rupasree Project

‘বিয়ে বাড়ি’ দেখে অবাক বিডিও

পুলিশ একজন আবেদনকারীর বাবা এবং অন্য আবেদনকারীর পঞ্চায়েত সদস্য সহ ৪ জন সাক্ষীকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা
আহিরণ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২১ ০৬:৩৫
Share: Save:

রূপশ্রী প্রকল্পে বিয়ের জন্য আবেদন করেছেন যিনি, তাঁরই দুই ছেলে মেয়ে উঠোনে দাদুর সঙ্গে খেলা করছে। বিস্ময় বুঝি আরও অপেক্ষা করছিল আর এক বাড়িতে গিয়ে। সোমবারই ছিল তাঁর বিয়ে। ভরদুপুরে সেই বিয়ে বাড়িতে গিয়েই দেখা গেল উঠোনে হাঁটাহাঁটি করছেন গর্ভবতী সেই তরুণী।

সোমবার রূপশ্রী প্রকল্পে দুই আবেদনকারী মহিলার বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে এই দৃশ্য দেখে হতবাক সুতি ১ ব্লকের বিডিও মহম্মদ হাদিউজ্জামান রিয়াজুল হক। পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই সোমবার বিডিও নিজেই গিয়েছিলেন সাদিকপুরের মিস্ত্রিপাড়া ও রঘুনাথপুর গ্রামের ওই দুই বাড়িতে। দুজনেই সুতি ১ ব্লক অফিসে রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন তাদের বিয়ের দিনক্ষণ জানিয়ে। আবেদনে মিস্ত্রিপাড়ার নার্গিস খাতুনের বিয়ের দিন ছিল ১০ জুন। আর রঘুনাথপুরের জেসমিনা খাতুনের বিয়ের দিন দেখানো হয়েছিল ২৮ জুন অর্থাৎ সোমবার। আর তারই তদন্ত করতে সরাসরি তাদের বাড়িতে গিয়ে বিডিও’র চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।

বিডিও বলছেন, “দুই ছেলে মেয়ের মা নার্গিসের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি বছর ছয়েক আগে তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে আহিরণে রমজান শেখের সঙ্গে। দিব্যি ঘর সংসার করছেন তাঁরা। আর জেসমিনার বিয়ে হয়েছে তিন বছর আগে শমসেরগঞ্জের নিমতিতার শেরপুরে হাবিল শেখের সঙ্গে। তাঁদের প্রথম সন্তান মারা গেছে। দ্বিতীয়বারের জন্য গর্ভবতী জেসমিনা। দুটি ক্ষেত্রেই বাস্তব ঘটনা লুকিয়ে ওরা আবেদন করেছে, যাতে স্বাক্ষর করেছেন এলাকারই ৫ জন বাসিন্দা দুই তরুণীর ভুয়া বিয়ের আবেদনকে সত্য বলে। এদের মধ্যে একজন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যও রয়েছেন।”

বিডিও জানান, এই ভাবে ভুয়া বিয়ে দেখিয়ে জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসতেই পুলিশ একজন আবেদনকারীর বাবা এবং অন্য আবেদনকারীর পঞ্চায়েত সদস্য সহ ৪ জন সাক্ষীকেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। এর পিছনে একটি চক্র রয়েছে বলেই সন্দেহ। সেই চক্রটিকে ধরতেই যা যা করার সেই পথেই এগোনো হচ্ছে।

দুই আবেদনকারীরই সাফাই, এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না। সবটাই করেছেন তাঁদের পরিবারের লোক। তাঁরা শুধু আবেদনের ফর্মে সই করেছেন মাত্র।

পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও সিপিএম জেলা কমিটির নেতা অসিত দাস বলছেন, “বর্তমান বিডিও নতুন এসেছে। তাই এই দুর্নীতি দেখে অবাক হচ্ছেন। তার আসার আগে সুতি ১ ব্লক অফিসে রূপশ্রী প্রকল্পে ভুরি ভুরি দুর্নীতি হয়েছে। একাধিক চক্র রয়েছে এলাকায়। এদের সঙ্গে যুক্ত পঞ্চায়েতের কিছু সদস্য, ব্লক অফিসের তদন্তকারী অফিসারেরা। এমন মহিলাও রূপশ্রী প্রকল্পে টাকা পেয়েছে যার মেয়েরও বিয়ে হয়ে নাতি নাতনি রয়েছে তাঁর। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কাটমানি নিয়ে ২৫ হাজার টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিডিওকে এনিয়ে বহুবার অভিযোগ জানিয়ে তদন্ত দাবি করেছি। কিন্তু কোনও তদন্ত হয়নি।”

জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ আশিস তিওয়ারি বলছেন, “প্রতিটি গ্রামে রূপশ্রীর এক শ্রেণির দালাল তৈরি হয়েছে। তারাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রভাবিত করছেন ভুয়া তথ্য দিয়ে আবেদন করতে। যার বিয়ে হয়ে গেছে ১০ বছর আগে তাকে পাত্রী দেখিয়ে বিয়ের ভুয়া দিন ঠিক করে আবেদন করে সরকারি সাহায্য হাতিয়েছেন বহু পরিবার। পাত্রীর পরিবার পাওয়া টাকার ১০ হাজার টাকা দালালকে দিয়ে নিজে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা। এইভাবে দুর্নীতি হয়েছে রূপশ্রী প্রকল্পে। আজ নতুন বিডিও নিজে তদন্ত করে ধরেছেন। এতদিন সব তদন্তই হয়েছে অফিসে বসে। সেগুলি নিয়ে তদন্ত নামলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়বে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Rupasree Project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy