নিখোঁজ দীপ্তি। নিজস্ব চিত্র।
স্নানযাত্রার দিন রাজাপুরের জগন্নাথ মন্দির চত্বরে এক জনকে অনেকেই খেয়াল করেছিলেন। উদভ্রান্ত চেহারা, বছর চল্লিশের লোকটি নিজের মোবাইলে এক মহিলার ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছিলেন, কেউ তাঁকে দেখেছেন কিনা।
গত কয়েক দিন ধরেই নবদ্বীপের মঠ-মন্দিরে দেখা যাচ্ছে বাসুদেব জালানকে। গত ১১ জুন শিলিগুড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন তাঁর স্ত্রী, বছর পঁয়ত্রিশের দীপ্তি দাস। স্ত্রীর খোঁজে তিনি নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের মন্দিরগুলিতে হন্যে হয়ে সন্ধান চালাচ্ছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বগুড়ার বাসিন্দা বাসুদেব পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁরা নিঃসন্তান। সেই সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য গত মার্চে ভারতে আসেন। বাসুদেব বলেন, “গত ১ মার্চ আমরা প্রথমে কেরলে যাই স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য। টানা কয়েক সপ্তাহ ওখানে থেকে চিকিৎসা করিয়ে চলে আসি নবদ্বীপে মহাপ্রভু দর্শনের উদ্দেশ্যে। আমার স্ত্রী ভীষণ ঠাকুরভক্ত।” তিনি জানান, ওই দফায় তাঁরা নবদ্বীপ ও মায়াপুর মিলিয়ে ১০ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ছিলেন। তার পরে শিলিগুড়ির মিলনপল্লিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। ঠিক ছিল, দেখাসাক্ষাৎ সেরে বাংলাদেশ ফিরে যাবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হন বাসুদেব। দিন কুড়ি ঘরবন্দি থাকতে হয়।
বাসুদেব জানান, সুস্থ হওয়ার পরে গত ১১ জুন সকাল ১০টা নাগাদ তিনি এবং তাঁর স্ত্রী শিলিগুড়ি গৌড়ীয় মঠে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান দীপ্তি। বাসুদেবের কথায়, “দর্শনের পর আমার স্ত্রী বলে যে সে আরও কিছুক্ষণ থাকবে, জপতপ করবে, আমি যেন বাইরে গিয়ে কিছু খেয়ে আসি। দু’জনেই কিছু না খেয়ে মন্দিরে গিয়েছিলাম। আধ ঘণ্টা পর ফিরে গিয়ে দেখি, ও সেখানে নেই। মন্দিরে উপস্থিত এক বয়স্ক মহিলা জানান, আমি চলে যাওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে আমার স্ত্রী মন্দির থেকে বেরিয়ে যান।”
পরের দিন শিলিগুড়ি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন বাসুদেব। খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বাসুদেবের কথা অনুযায়ী, শিলিগুড়ি স্টেশনে কয়েক জন তাঁর স্ত্রীর ছবি দেখে জানান, এঁকে তাঁরা ডাউন কামরূপ এক্সপ্রেসে একা যেতে দেখেছেন। তিনি ফের নবদ্বীপে চলে যেতে পারেন অনুমান করে ১৫ জুন রাতের কামরূপে বাসুদেবও নবদ্বীপে চলে আসেন। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যে নবদ্বীপের হনুমান ও সমাজবাড়ির মত দু’একটি মন্দিরের দু’এক জন তাঁর স্ত্রীর ছবি বলেছেন, গত কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে দেখেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে হদিস দিতে পারেননি কেউ।
শিলিগুড়ি থানায় করা নিখোঁজ ডায়েরির সূত্র ধরে নবদ্বীপ থানাতেও যোগাযোগ করেছেন বাসুদেব। পুলিশও সন্ধান শুরু করছে। বাসুদেব বলেন, “আধ্যাত্মিক বিষয়ে ওর টান ক্রমশ বাড়ছিল। সারা দিন মোবাইলে পাঠ-কীর্তন শুনত। এ রকম পরিবেশে ওর থাকতে ভাল লাগে, এমন কথাও বলেছে। কিন্তু তা বলে এ ভাবে কোথায় চলে গেল?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy