ঝিকরার রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
হঠাৎ কানে এল কান্নার শব্দ। একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়া জল-কাদা ভরা আমার বুকের উপর দিয়ে যেতে গিয়ে আছাড় খেল। সত্যি বলতে, এমন কান্না আমার সয়ে গিয়েছে।
আমি এখানে ঝিকরা-হেরোপাড়া গ্রামের রাস্তা নামে পরিচিত। তবে ঝিকরা থেকে নওদার সর্বাঙ্গপুর যাওয়ার রাস্তা নামে বেশি জনপ্রিয়। আমার জন্ম কবে জানি না। তবে ঝিকরা গ্রামের প্রবীণ প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সুকদেব হাজরার মুখে শুনেছি, জন্ম থেকে আমাকে দেখছেন। প্রথমে মাটির ছিলাম। তার কয়েক দশক পর লাল মোড়ামের চাদর বিছান হলো। তখন থেকে ছোট বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, টোটো, মোটর বাইক, সাইকেল চলাচল শুরু হয়। প্রথম প্রথম ভালই ছিলাম। কিন্তু তারপর কোনও মেরামতি নেই। কেউ ফিরেও তাকায় না। সদা অবহেলায় রোগগ্রস্ত অবস্থা হল আমার।
কিন্তু হাঁটা চলা করে সকলেই। আমার পাশে যে জমি রয়েছে সেখানে পেঁয়াজ ও পাট হয়। এই পেঁয়াজ ও পাট জমি থেকে তুলে বাজারে নিয়ে যায় আমার এই জীর্ণ বুক ধরে। ছয় থেকে আট হাজার মানুষ আমার দু’দিকে বসবাস করে। আমার দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটার। আমার উপর দিয়ে দেখেছি প্রসূতি মায়েদের বাঁশের খাটুলিতে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃষ্টিতে আমার যা অবস্থা হয় সেখানে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। তাই অসুস্থ রোগী মানুষের কাঁধে বসে চলাচল করে। বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ। পরপর কয়েক দিন বৃষ্টির জেরে আমার বেহাল অবস্থা। সারা শরীরে ক্ষত চিহ্ন। সেই ক্ষতে বিয়ের পাত্রের গাড়ি আটকে যায়। গাড়ি থেকে নেমে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যেতে হয়।
গ্রামের মানুষ রাস্তায় পড়ে যায়। হাত, পা ভাঙে। শনিবার আমার উপর দিয়ে বাসন্তী প্রতিমা লছিমনে তুলে নিয়ে যাওয়া হল। প্রচুর মানুষ তার মধ্যে নাচানাচি করল। আবির উড়ল। আমার ধুসর রঙে মিশে গেল। ঝিকরা গ্রামের মধ্যে আমার তিনটে ভাগ হয়েছে। বাঁয়ে গ্রামের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। সোজা গেলে মাঠ হয়ে কালীতলা। ডানের পথ সর্বাঙ্গপুর। গ্রামের দিশা মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি বর্ষায় কী ভাবে সে স্কুলে যায়। সম্প্রতি আমার একটা অংশে ঢালাই হয়েছে। কিন্তু সেটা ৩০০ মিটারের বেশি নয়। সেই নতুন ঢালাইও ভেঙে গিয়েছে কিছু স্থানে।
কাশিপুর পঞ্চায়েত প্রধান ফিরোজা বিবি বললেন, ‘‘১১ এপ্রিলের মধ্যে কিছু রাস্তা তৈরির টেন্ডার হবে। তারপর রাস্তা নতুন হবে। সমস্যা থাকবে না। সকলে খুব ভাল ভাবে হাঁটাচলা করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy