কৃষ্ণনগর-নবদ্বীপ ঘাট রুটে বন্ধ অটো চলাচল। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
পর্যটনের ভরা মরসুমে রুটের দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই ইউনিয়নের কাজিয়ার জেরে মঙ্গলবার থেকে বন্ধ হয়ে গেল নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর স্টেশন রুটে অটো চলাচল। চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়ছেন নিত্যযাত্রী থেকে ছুটির মরসুমে মায়াপুর, নবদ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা। মওকা বুঝে ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকছে টোটো এবং অন্যান্য ছোটো গাড়ির চালকেরা।
অটো চালকদের একাংশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অটো চলাচল নিয়ে বিবাদ নতুন কিছু নয়। পর্যটন মরসুমে ভিড় বাড়লেই আইএনটিটিইউসি-র ছত্রছায়ায় থাকা দুই অটো ইউনিয়ন লাভজনক ওই রুটের উপর নিজেদের একাধিপত্য কায়েম করতে তৎপর হয়ে পড়ে। নবদ্বীপ-ঘাট থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশন রুটে আইএনটিটিইউসির দু’টি অটো ইউনিয়ন আছে। একটি কৃষ্ণনগর, অন্যটি নবদ্বীপ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। নবদ্বীপ শাখার অভিযোগ, কৃষ্ণনগর শাখার তরফে এ দিকের অটোগুলিকে কৃষ্ণনগর স্টেশন পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে দেওয়া হয় না। নানা বাধা সৃষ্টি করা হয়। পাল্টা কৃষ্ণনগর শাখার অভিযোগ, নবদ্বীপ ঘাট বা মায়াপুর ঘাট থেকে অন্য রুটের অটো নিয়ম বহির্ভূত ভাবে চালানো হচ্ছে।
অটো চালকদের একাংশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একই কারণে ওই রুটে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অটো চলাচল। এ বছর সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। গোলমালের সূত্রপাত সোমবার থেকে। নবদ্বীপ ঘাট-কৃষ্ণনগর স্টেশন রুট নিয়ে বহুকালের বিবাদ মেটাতে সম্প্রতি দু’পক্ষের মধ্যে একটি আলোচনা হয়। তাতে ঠিক হয়েছিল মায়াপুর ঘাটে যাত্রী পরিবহণের সময় কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দু’টি অটোর পর একটি করে নবদ্বীপ ইউনিয়নের অটো যাত্রী তুলবে। সেই কথা মতো সোমবার থেকে অটো চলাচল শুরু হয়। মায়াপুর ঘাটের অটো চালকদের অভিযোগ, ওইভাবে যাত্রী নিয়ে কৃষ্ণনগরে গেলেই তাঁদের মারধর করা হচ্ছে, চাবি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। স্টেশন ঢুকতে দেওয়া হয় না, যাত্রীদের বলা হয় ৩০ টাকার বদলে ২০ টাকা ভাড়া দিতে। সে খবর পেয়ে কৃষ্ণনগর থেকে আসা অটোর সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে। তার পরেই মঙ্গলবার থেকে যাবতীয় অটো বন্ধ হয়ে যায় ওই রুটে।
অটো চালকদের একাংশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরূপগঞ্জে নবদ্বীপ ঘাট এবং মায়াপুর ঘাট থেকে দুশোর বেশি অটো চলাচল করে। তাঁদের মধ্যে সরাসরি কৃষ্ণনগর স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করার অনুমতি খুব অল্প অটোর আছে। বাকি সব অটো ভিন্ রুটের পারমিট নিয়ে এই পথে ভাড়া খাটে। তা নিয়েই সমস্যা। কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের অটোচালকদের অভিযোগ, নবদ্বীপ ইউনিয়নের বেশির ভাগ অটোর অনুমতি যাত্রাপুর থেকে গৌরনগর পর্যন্ত। অথচ নিয়ম ভেঙে নবদ্বীপ ঘাট থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করে বহু অটো। প্রকৃত অনুমতি যাঁদের আছে, তাঁরা মার খাচ্ছেন। নবদ্বীপ ইউনিয়নের পাল্টা দাবি, কৃষ্ণনগর থেকে যাঁরা নবদ্বীপ ঘাটে যাত্রী নিয়ে আসছেন তাঁদের অধিকাংশের পারমিট শ্যামপুর বাজার পর্যন্ত। তাঁরাও আরও ছয় কিলোমিটার রাস্তা বি না অনুমতিতে আসছেন।
এই বিষয়ে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত নবদ্বীপ ঘাট অটো ইউনিয়নের সম্পাদক আনন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগরের অনেক অটোচালক আছেন, যাঁদের এই রুটে চলার মতো কাগজপত্র নেই। তবুও আমরা ওঁদের বাধা দিইনি। অথচ এখন ওঁরা আমাদের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও গাড়ি চালাতে দিচ্ছে না। এই ঝামেলা মেটাতে উভয়পক্ষ বসে ‘রোটেশন’ ঠিক হয়। সোমবার থেকে ওরা আমাদের কৃষ্ণনগর স্টেশন ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই আমরাও ওদের এখানে ঢুকতে দিচ্ছি না।’’
অন্য দিকে, এই রুটের আইএনটিটিইউসি পরিচালিত অটো ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর স্টেশন ইউনিটের সভাপতি বীরেন দেবনাথ বলেন, ‘‘স্বরূপগঞ্জ ঘাট থেকে কৃষ্ণনগর স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করার অনুমতি ওদের নেই। বলা আছে যাঁর যেখানে পারমিট আছে, তিনি সেখানে গাড়ি চালাবেন। কিন্তু ওঁরা সেটা মানছেন না। অন্যায় ভাবে অন্য রুটে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমরা বিষয়টা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy