ধুলো উড়িয়ে গাড়িটা হুশ করে বেরিয়ে যেতেই যেন ঝুপ করে ‘সিন’ পড়ে য়ায়। খানিক চুপ। তারপর ইব্রাহিমের চায়ের দোকানটা পের তাদের পুরনো চেহারায় ফিরে আসে।
— গায়ে কোনও ধুলো লাগে না দেখেছিস
যাকে বিঁধে কথাটা ভাসিয়ে দিয়েছিল আব্দুল, সাড়ে তিন টাকার গেলাশে লম্বা একটা চুমুক দিয়ে সেই আক্রাম মিঞা এ বার চিবিয়ে চিবিয়ে জবাবটা ফিরিয়ে দেম, ‘‘ওরে শুয়োরের ... তোদের মতো তো পয়সা ওড়ায় না, বরং সেই পয়সায় জামাটা সফেদ রাকে বুঝেছিস!’’
মানেটা বোঝার চেষ্টা করে আস্ত ভিড়টা। তেমন জুতসই কিছু না পেয়ে সস্তার একটা সিগারেট ধরিয়ে এ বার পাঁড় কংগ্রেস সমর্থক গোলাম আলি বলেন, ‘‘তা বাপু তোমার হুমায়ুনের যদি এতই পয়সার অভাব তা কংগ্রেসটা ছাড়লে কেন, বেশ তো খেয়ে পড়ে অধীরের পোঁ ধরে চলছিল, যত্তোসব!’’
এ সব আলোচনা থেকে অবশ্য দূরেই থাকছেন সদানন্দবাবু। সদানন্দ মুখোপাধ্যায়। বয়স ষাট পেরিয়ে গেলেও এখনও দলনেত্রীকে ‘দিদি’ বলেই তাঁর গভীর তৃপ্তি। ভোটের গতি প্রকৃতি নিয়ে একটু দ্বিধায় থাকলেও রেজিনগরে যে দিদির প্রার্থী সিদ্দিকা বেগম হারছেন, একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন লটারি বিক্রেতা সদানন্দ। বলছেমন, ‘‘এখন তো ওরাই গোলাবারুদ ছাড়বে। ওই তর্কে না গিয়ে চা খেয়ে কেটে পড়াই ভাল।’’
রেজিনগর মোড়ে চায়ের দোকানে নিত্য জটলায় এখন রোজ সাঁঝে এ চলছে ছুরি-কাঁচি। তবে সে ছুরিতে কার ধার বেশি তা হলফ করে বলা মুশকিল।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর রেজিনগর স্টেশন মোড়ের কাছে লম্বাটে মাঠটা এই ক’দিন আগেও ভেসে গিয়েছিল ভিড়ে। সে ভিড় দেখে কংগ্রেস-তৃণমূল দু’পক্ষই কপালের ঘাম মুছে বলেছিলেন, ‘‘হুমায়ুনের দম আছে!’’ একদা কংগ্রেস ছেড়ে সটান মন্ত্রী হয়ে যাওয়া এবং দলবিরোধী কথা বলে একেবারে তৃণমূল থেকে ছাঁটাই হয়ে যাওয়া হুমায়ুনও বলছেন, ‘‘জিতব ঠিকই, পাঁচশো ভোটে হলেও!’’
কথাটা হাওয়ায় ভাসতে বাসতে এসে পড়েছিল কাপাসডাঙায়। স্থানীয় কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্য মনিরুল হক বলেন, ‘‘আমি বলছি, কংগ্রেস ২০ হাজারের কম ভোটে জিতলে লাখ টাকার ফিস্ট হবে। আমি খাওয়াবো!’’ হুমায়ুন কবীরের সক্রিয় কর্মী ফুলবাবু শেখ পাল্টা বলছেন, ‘‘ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে বাজিটা হচ্ছে, আমাদের পক্ষে। জিতে দেখাক আমিও খাওয়াবো, কথা দিলাম।’’
তবে একটা ভয়ও আছে, হুমায়ুনের এক সমর্থকের দাবি, ইভিএম-এ ছোট জায়গায় টেবিল খুঁজে পাননি অনেকেই। ফলে তাঁরা ধরে নিয়েছেন হুমায়ুন তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের পরে কংগ্রেসেই ভিড়েছেন। সেই সব হিসেব কষে ভোটটাও তাঁরা দেগে দিয়েছেন কংগ্রেসকে। যাকে কংগ্রেসের চক্রান্ত বলেই মনে করছেন তাঁরা। সেই ভরসায় নতুন করে বুক বেঁধেছেন কংগ্রেসের সমর্থকেরা।
শক্তিপুরের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘তবে কোন পরিচিত প্রতীকে না দাঁড়িয়েও হুমায়ুনকে নিয়েই জেলা জুড়ে আলোচনা। এটা কম কথা নেয়। কোন নির্দল প্রার্থীর এই ধরনের ক্ষমতা রাখে বলুন তো!’’
তা কি আদৌ ক্ষমতা নাকি, হাওয়া বেলুন, ইনিশি আড্ডায় ঘুরে ফিরে সে কথাই ঠোক্কর খাচ্ছে চায়ের ভাঁড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy